ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের প্রতি সমর্থন জানানো এবং তেল আবিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে নিজ দেশের জনগণের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইরানের স্বঘোষিত যুবরাজ রেজা পাহলভি। তিনি ইরানের শেষ সম্রাট মোহাম্মদ রেজা পাহলভির নির্বাসিত ছেলে, যিনি নিজেকে ইরানের 'যুবরাজ' দাবি করেন।
গত ২৪ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রেজা পাহলভি বলেন, “এটাই আমাদের বার্লিন ওয়াল মুহূর্ত।” তিনি ইরানিদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু না করার আহ্বানও জানান।
তবে তার এই আহ্বানে জনগণের তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। বরং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় ৯৩৫ জনের বেশি ইরানি নিহত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ জাতীয়তাবাদের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসে।
সমালোচকদের মতে, ইসরায়েলি হামলায় যখন নিরীহ ইরানিরা প্রাণ হারাচ্ছেন, ঠিক তখনই রেজা পাহলভি প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে ধসে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্লেষক ত্রিতা পার্সি বলেন, “যখন আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপর বোমা পড়ছে, ঠিক তখন তিনি টিভিতে এসে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলছেন—এটি তার রাজনৈতিক ব্র্যান্ডের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল আসলে রেজাকে নিজেদের আগ্রাসনের পক্ষে বৈধতা তৈরি করতে ব্যবহার করছে।
রেজা পাহলভির পারিবারিক শাসনকাল ইরানিদের স্মৃতিতে আজও দমন-পীড়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, তার দাদা রেজা খান এবং বাবা মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলে ber feared গোয়েন্দা সংস্থা 'সাভাক' রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মম নির্যাতনের জন্য ber notorious ছিল।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিল পাহলভি পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি তাদের উদাসীনতা।
২০২৩ সালে রেজা পাহলভি ইসরায়েল সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবি তুলেন, যা তাকে আরও বিতর্কিত করে তোলে। এরপর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ইরান বিরোধী বিভিন্ন দলীয় বৈঠকে অংশ নিলেও সেখানে মতামত গ্রহণ না করে নিজেকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। এতে 'Alliance for Democracy and Freedom in Iran' নামের জোটটি ভেঙে যায়।
ইসরায়েল সফরে তিনি ইহুদিদের ধর্মীয় স্থাপনা ওয়েস্টার্ন ওয়াল পরিদর্শন করলেও মুসলমানদের জন্য পবিত্র আল-আকসা মসজিদে যাননি। এ কারণে অনেক ইরানি মনে করেন, তিনি সাধারণ জনগণের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন।
সূত্র: আলজাজিরা
এনএইচ/