বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
সিরীয়ার উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সাসাকাওয়ার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় মুফতী বোর্ডের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত আবরার ফাহাদকে হত্যা বৈধ ছিল : ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে: ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘ভারতের দালালরা ছোবল মারতে দেশের মধ্যেেই ঘাঁপটি মেরে আছে’ হেফাজতের মামলা সংখ্যা ৪৪টি নয়, ২২০টি কাজী নজরুল বাংলার সার্বজনীন কবি: অভিনেতা আবদুল আজিজ বাংলাদেশের আকাশে জিলহজের চাঁদ, ঈদুল আজহা ৭ জুন শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগীদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম

একা ছাগল কোরবানি দেওয়া উত্তম নাকি শরিকে গরু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কোরবানির ঈদ মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও আত্মত্যাগের এক অনন্য উপলক্ষ। এই দিনে সামর্থ্যবান মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেন। কোরবানি একাকী বা শরিকে উভয় পন্থায় করা যায়। তবে ইসলাম শরিকে কোরবানিকে বৈধ বললেও, একা কোরবানি করাকে বেশি ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ত্যাগ ও খুশির পূর্ণতা
কোরবানির মূল শিক্ষা হলো—আত্মত্যাগ। একা কোরবানি করার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সম্পদ ও ভালবাসার পশুটি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন। এতে তার ঈমানের প্রকাশ ও ত্যাগের বাস্তবতা উভয়ই প্রকাশ পায়।

সুন্নাহর অনুসরণ
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) নিজ হাতে দুটি শিংওয়ালা বড় দুম্বা কোরবানি করেছিলেন এবং নিজের জন্য একাই কোরবানি দিতেন। বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, রাসুল (স.)-এর এই আমল অনুসরণ করে একা কোরবানি করা সুন্নাহর এক অনুপম দৃষ্টান্ত। যদিও শরিকে কোরবানি করা দোষণীয় নয়। সাহাবিরা শরিকেও কোরবানি করতেন। ইবেন আব্বাস বলেন, ‘আমরা এক সফরে ছিলাম। অতঃপর কোরবানি এলো। সুতরাং আমরা গাভীতে সাতজন এবং উটে দশজন শরিক হলাম।’ (তিরমিজি: ৯০৫; ইবনে মাজাহ: ৩১৩১)


সম্পূর্ণ সওয়াব একার জন্য
একজন ব্যক্তি যদি একাই একটি গরু, ছাগল বা উট কোরবানি করেন, তবে ওই পশুর পুরো সওয়াব একাই অর্জন করেন। এতে ইবাদতের ব্যক্তিগত গভীরতা ও আত্মত্যাগের প্রকাশ আরও বেশি স্পষ্ট হয়। হাদিসে এসেছে, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭) 

তবে, শরিকে করলে সওয়াব কম হবে—এমন কথা বলা অনুচিত। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দার তাকওয়াটাই দেখেন। কোরবানির নিয়ত যার যত বেশি সুন্দর, তার তত বেশি সওয়াব হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, (মনে রেখো, কোরবানির জন্তুর) গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই  পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে কেবলমাত্র তোমাদের পরহেযগারিই পৌঁছে। (সুরা হজ: ৩৭)

সন্দেহ ও ফিকহি জটিলতা থেকে মুক্তি
যৌথ কোরবানিতে অংশীদারদের নিয়ত, হারাম উপার্জনের সংমিশ্রণ, অংশ নির্ধারণ, পশু নির্বাচনে একমত হওয়া, মাংস সমান ভাগ করা ইত্যাদিতে প্রায়ই ভুল বা মতানৈক্য দেখা যায়। একা কোরবানি করলে এসব জটিলতা থাকে না। ফলে ইবাদত হয় নিরবচ্ছিন্ন ও নিখুঁত। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, একজনের জন্য ছাগল বা ভেড়া কোরবানি করাই উত্তম। (শরহে মুসলিম: ১৩/১২০)

 
অংশীদারি কোরবানি বৈধ, তবে...
ইসলামে সাতজন পর্যন্ত একটি গরু বা উটে অংশ নিতে পারে। রাসুল (স.)-এর যুগে সাহাবিরা এই পদ্ধতিতে কোরবানি করেছেন। তাই তা জায়েজ ও গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ যদি একা কোরবানি করার সামর্থ্য রাখেন, তবে সেটিই বেশি ফজিলতপূর্ণ বলে ফিকহবিদরা মত দিয়েছেন। ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘যদি কেউ একাই কোরবানি করতে পারে, তবে তার জন্য একা কোরবানি করাই উত্তম।’ (আল-মুগনি: ১১/১০৯)

উল্লেখ্য, সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে (মুসলিম: ১৩১৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)। গরু-মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীতে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার হতে পারেন, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)

শেষ কথা হলো, একাকী কোরবানি করা পূর্ণ সওয়াবের পথ এবং আত্মত্যাগের নিখুঁত উদাহরণ। ইসলামি শরিয়তে যৌথ কোরবানি বৈধ হলেও, একা কোরবানি করলে ইখলাস, আত্মত্যাগ ও ফজিলতের দিক থেকে তা অধিক ভালো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়ত ও ইখলাস। আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমিন।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ