আগামী পাঁচ বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। এতে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (২৮ মে) প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় (ডব্লিউএমও)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছর হবে ২০২৪ সালের চেয়েও উষ্ণ, যা ইতিমধ্যেই ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই পূর্বাভাস শুধু বৈশ্বিক মাত্রায়ই নয়, বরং জলবায়ু-সংবেদনশীল বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এক অশনিসঙ্কেত। কারণ এর প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘমেয়াদি খরা ও চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও।
ডব্লিউএমও বলছে, আগামী ৫ বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫-২০২৯ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হওয়ার ৮০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বাড়ার ফলে সাগরের পানি গরম হচ্ছে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এবং অতি বর্ষণ, খরা ও দাবদাহের মতো চরম আবহাওয়া নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচু দেশগুলো ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও গুরুতর প্রভাবের মুখে রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে, এসব দেশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও লবণাক্ততার প্রকোপ বাড়বে, কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় গড় বৃষ্টিপাত বেড়েছে, এবং এই ধারা ২০২৫-২০২৯ সময়কালেও অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
যদিও সকল মৌসুমে এটি প্রযোজ্য না-ও হতে পারে।
ডব্লিউএমও বলছে, আর্কটিক অঞ্চলে পরবর্তী পাঁচ শীতকালে (নভেম্বর থেকে মার্চ) তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ৩.৫ গুণ বেশি, অর্থাৎ প্রায় ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। ব্যারেন্ট সাগর, বেরিং সাগর এবং ওখোতস্ক সাগরে বরফের পরিমাণও হ্রাস পাবে।
ডব্লিউএমও এর উপ-মহাসচিব কো ব্যারেট বলেন, ‘গত দশটি বছর ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই প্রতিবেদন আগামীতে কোনো স্বস্তির ইঙ্গিত দেয় না।
এর অর্থ হলো, আমাদের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, বাস্তুসংস্থান ও পৃথিবী আরো চাপে পড়বে।’
প্যারিস চুক্তির অধীনে, দেশগুলো সম্মত হয়েছে যে দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক গড় ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখবে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়লে জলবায়ু পরিবর্তনের আরো মারাত্মক প্রভাব এবং চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে।
চলতি বছর কপ-৩০ সম্মেলনে হালনাগাদ জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা (এনডিসি) আলোচনায় আসবে, যা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসএকে/