আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিল ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জমিয়ত সভাপতি মাওলানা শায়েখ জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার পরিচালনায় এ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন জমিয়তের জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদি, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা তফাজ্জল হক আজিজ, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা লোকমান মাযহারী, ড. শোয়াইব আহমদ, সৈয়দ তামিম আহমদ, মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী,মুফতি নাসির উদ্দীন খান, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি বশিরুল হাসান খাদিমানী, মুফতি নুর মোহাম্মদ কাসেমী ও মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী প্রমুখ।
কাউন্সিলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা গৃহীত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
শাপলা চত্বর, মোদি বিরোধী আন্দোলন, পিলখানা হত্যা ও জুলাই বিপ্লবের ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি এবং জমিয়ত ও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান।
২. জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে এক দফার লড়াই আমরা করেছিলাম, সেটা ছিল মূলত ফ্যাসিবাদের বা স্বৈরাচারের পতন এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটি অর্জিত হয়েছে, আরেকটি অর্জনের পথে আছে। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান।
৩. সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবনায় কিছু বিতর্কিত বিষয় স্থান পেয়েছে বলে মনে করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতিত বহুত্ববাদ যুক্ত করাকে জমিয়ত ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। সংবিধানে বহুত্ববাদ সংযোজনের বিরোধিতা এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস বহাল রাখার দাবি।
৪. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে;যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা প্রদানের কথা বলে আল্লাহর বিধানের সাথে তামাশা করা হয়েছে। তােই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় ধর্মীয় বিধানকে অবমাননার অভিযোগ তুলে পুরো কমিশন বাতিলের জোর দাবি জানানো।
৫.ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্বমুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে। মুসলিমবিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না। সুতরাং বাংলাদেশসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং ‘নিপীড়িত’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগকেও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য এ অধিবেশন থেকে জোর দাবি জানানো হয়।
৬. পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে মুসলমানদের ওপর বারবার নির্যাতনের কাহিনী ঘটছে,মসজিদ-মাদরাসাসহ মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনায় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে, বিশেষ করে দেশটির পার্লামেন্টে সম্প্রতি যে ওয়াকফ আইন সংশোধনী পাস হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ভারতে মুসলমানদের কোনো উপাশনালয় থাকবে না। সুতরাং জমিয়তের আজকের এ অধিবেশন এ ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল বাতিল করতে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানানোর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
৭.আমাদের প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে,দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য ভারত ও পাকিস্তানকে পরষ্পরের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আরো সংযত হওয়া ও আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসার জন্য আজকের কাউন্সিল বিনীতভাবে আহবান করা হয়।
কাউন্সিল শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৫-২৭ মেয়াদের জন্য ২০১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন—
সভাপতি: মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
সিনিয়র সহ-সভাপতি: মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী
মহাসচিব: মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
সাংগঠনিক সম্পাদক: মাওলানা লোকমান মাযহারী
প্রচার সম্পাদক: মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী
অর্থ সম্পাদক: মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী।
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আজকের কাউন্সিল অধিবেশন শেষ হয়।
এমএইচ/