মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা বিষয়ক গেজেটে ভিত্তিহীনভাবে নেজামে ইসলাম পার্টির নাম জড়ানোয় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, নেজামে ইসলাম পার্টি প্রখ্যাত বুযুর্গ মনীষী ও বিদগ্ধ ওলামাদের হাতে গড়া একটি ঐতিহ্যবাহী ইসলামি রাজনৈতিক দল। এ দেশকে ব্রিটিশের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আযাদী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামই এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠিতা। দেশ ও জাতির স্বার্থ বিরোধী যাবতীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে নেজামে ইসলাম পার্টি সবসময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এসেছে। ইসলাম, দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রাচীনতম এ ইসলামী রাজনৈতিক দলের দূরদর্শিতাপূর্ণ অবস্থান ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান সচেতন মহলে সমাদৃত।
তারা বলেন, এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞার আবরণে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ ইসলামী রাজনৈতিক দলকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকেই দুর্বল করার নতুন ষড়যন্ত্র। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামাদের নেতৃত্বাধীন এ সংগঠনকে বিতর্কিত করার এহেন প্রয়াস দেশের আলেম-ওলামাসহ সচেতন নাগরিকসমাজকে সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।
অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা বিষয়ক গেজেট থেকে বিতর্কিতভাবে যুক্ত নেজামে ইসলাম পার্টির নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, নেজামে ইসলাম নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চরম জুলুম ও বৈষম্যের স্থায়ী অবসানে মাঠে-ময়দানে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নেজামে ইসলাম পার্টির বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ ছিল তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ এবং স্বদেশপ্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন ও ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানেও নেজামে ইসলাম পার্টির সাহসী ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই সাথে জুলুম-শোষণের অবসানে নিখিল পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরও ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির ঐতিহাসিক দাবি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকেও মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী রহ. ও নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বলে আখ্যায়িত করে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতাকে আধিপত্যবাদ বিস্তৃতির আশঙ্কায় সন্দেহের চোখে দেখলেও নেজামে ইসলাম পার্টির নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেননি এবং এমন কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্তও ছিল না। বরং নেজামে ইসলাম পার্টি সম্পৃক্ত অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন। যেমন খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ., আল্লামা ইসহাক আল-গাজী রহ., এড. ফিরোজ আহমদ চৌধুরীসহ নেজামে ইসলাম পার্টির অনেক নেতা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ও হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্রয় দেয়া ইতিহাস স্বীকৃত বিষয়।
তারা বলেন, সর্বোপরি স্বাধীনতা উত্তরকালেও সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের কল্যাণে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে নেজামে ইসলাম পার্টি গঠনমূলকভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এসেছে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ এর ফ্যাসিবাদ বিরোধী জুলাই অভ্যুত্থানেও নেজামে ইসলাম পার্টির ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
দেশের স্বার্থে নিবেদিত এমন একটি ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দলকে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে ভিত্তিহীনভাবে বিতর্কিত করার চক্রান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বিষয়ক নতুন গেজেট থেকে বিতর্কিতভাবে যুক্ত নেজামে ইসলাম পার্টির নাম বাদ দিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার সযত্ন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এমএইচ/