নাজমুল ইসলাম কাসিমি
লেখক ও মাদরাসা শিক্ষক
মিজানুর রহমান আজহারির সি-ফুড নিয়ে প্রথম ফতোয়ার পরিপূর্ণ আলোচনা শুনলাম। তিনি সি-ফুড নিয়ে সকল ওলামায়ে কেরামের মতামত উল্লেখ করে; শেষে এসে এভাবে সমাধান দিয়েছেন- ‘তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে; সামুদ্রিক সব ধরণের সি-ফুড খাওয়া জায়েজ; যদি এটা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর না হয়; এবং এর মধ্যে বিষাক্ত কোনো কিছু না থাকে। যদিও হানাফি কিছু ওলামায়ে কেরাম এগুলোকে মাকরূহ বলেছেন; কিন্তু এগুলোকে কখনো হারাম বলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিশ্বের মেজরিটি আলেমদের মতামত অনুসারে আমরা এটাকে জায়েজ বলছি। আপনি খেতে পারেন; কোনো সমস্যা নেই।
এবার আসুন বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ হানাফি হিসেবে আমরা একটু হানাফি মাজহাবটা দেখি-হানাফি মাজহাবের বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ফুকাহাদের মতামত হলো, মাছ ছাড়া অন্য কোনো জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েজ নেই। আর যেহেতু অক্টোপাস, স্কুইড (সামুদ্রিক বিশেষ প্রাণী), শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মাছ নয়, তাই এগুলো খাওয়াও নাজায়েজ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪; আল-বাহরুর রায়েক : ৮/৪৮৫; হাশিয়ায়ে তাহতাবি : ৪/৩৬০ ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/১১৮)।
প্রথমত এগুলো কোরআনে বর্ণিত ‘খাবায়েস’ (নোংরাবস্তু)-এর অন্তর্ভুক্ত। সুরা আল-আরাফে আল্লাহ তাআলা এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ‘খাবায়েস’ বলা হয়, যা মানুষ স্বভাবগত ঘৃণা করে। (বিস্তারিত তাফসিরে কাবির, আদওয়াউল বায়ান, আল-লুবাব, আলহাবি সংশ্লিষ্ট আয়াত)। আর মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজপ্রাণী রুচিশীল মানুষ স্বভাবতই ঘৃণা করে। সুতরাং সেগুলোও কোরআনের হুকুম অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
দ্বিতীয়ত, রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের জলজ প্রাণী খেয়েছেন বলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। উপরন্তু আবদুর রহমান বিন উসমান রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল সা. জনৈক চিকিৎসককে ব্যাঙ মেরে ওষুধ বানাতে নিষেধ করেছিলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭১)।
তৃতীয়ত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বলেন, ‘তোমাদের জন্য দুই ধরনের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও ফড়িং এবং দুই ধরনের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১৫; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৫৬৯০, দারাকুতনি, হাদিস নং : ৪৬৮৭, শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং : ২৮০৩)। তবে শাফেয়ি মাজহাবসহ আরববিশ্বের আলেমদের এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে-মুহতারাম মিজানুর রহমান আজহারি ফিকহে হানাফির উপর আমল করেন না। তাই তিনি ভাসাভাসা আয়াত আর হাদিস উল্লেখ করে বরাবরের মতো লা-মাজহাবি পন্থা অবলম্বন করে সি-ফুড নিয়ে তার ফতোয়ার ইতি টানলেন।
সুতরাং অক্টোপাস, স্কুইড (সামুদ্রিক বিশেষ প্রাণী), শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাবেন কী না; এর সম্পূর্ণটা নির্ভর করছে; আপনার মাজহাব মানা আর না মানার উপর।
তবে সর্বশেষ আজহারির প্রতি একটা অনুরাধ থাকবে! ভাইজান, বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ হানাফি মাজহাবকে অনুসরণ করে। আপনার শ্রোতাদের ৯৫% হলো বাংলাদেশী। সুতরাং ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাকে হানাফি মাজহাবকে পাশ কেটে গেলে ফিতনা কেবল বাড়তেই থাকবে। কমবে না মোটেও। আল্লাহ আপনার সুমতি দিন।
এমডব্লিউ/