বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬


কেঁদে বলতাম, আল্লাহ আমাকে ছেলে বানিয়ে দাও: কিশোরী আতিকা এখন আতিকুল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামে মেয়ে থেকে ছেলেতে পরিণত হয়েছে আতিকা আক্তার লোপা নামের এক মেয়ে। বর্তমানে মেয়েটি ছেলে হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছে আতিকুল ইসলাম। সে বলেন, আমি আল্লাহর কাছে কেঁদে বলতাম, আল্লাহ আমাকে ছেলে বানিয়ে দাও।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার সবগুলো অস্ত্রোপচার সঠিক না হলে তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হওয়ার ভয়ও রয়েছে।

আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য জেদ করলেও তাকে যেতে দেয়া হতো না। ঘরে ফিরে সে কাঁদতো। মাঝেমধ্যেই দোয়া করতাম, লুকিয়ে কেঁদে বলতাম, আল্লাহ তুমি আমাকে ছেলে বানিয়ে দাও, আমি যেন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে চাই।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার লিঙ্গান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এরইমধ্যে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরও দুটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। চিকিৎসকরা জানান, সময় মতো অপারেশন দুটি করা না হলে, পূর্ণাঙ্গ পুরুষের বদলে তার তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হবার শঙ্কাও আছে।

আতিকুলের বাবা আতাউর রহমানের মৃত্যুর পর মা শেফালী খাতুন পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। নিজের ও সন্তানের বেঁচে থাকার তাগিদে চলে যান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে গার্মেন্টশ্রমিকের জীবন বেছে নেন। একটা স্কুলেও ভর্তি করান মেয়েকে।

শেফালী বলেন, লোপা তখন (আতিকুলের আগের ডাক নাম) ক্লাস ফোরে। বয়স ১০ বছরের কম। হঠাৎই তার কণ্ঠস্বর বদলে যেতে শুরু করে। ছেলেদের মতো কণ্ঠস্বর হতে থাকে। প্রথমে তেমন কিছু মনে করিনি। কিন্তু এক সময় তার আচার-আচরণ ছেলেদের মতো হতে থাকে। চিন্তায় পড়ে যাই। কষ্ট করে টাকা সংগ্রহ করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিবাশ বরন বিশ্বাস বলেন, আমরা লোপার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর একটি মেডিকেল টিম গঠন করি। প্রথম ধাপের অপারেশন করার পর সে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে বাকী আরও দুটি অপারেশন সঠিক সময়ে করতে হবে। তাহলেই সে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হিসেবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন পাবে। তবে সঠিক সময়ে অপারেশন না হলে ঝুঁকি আছে, তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হবারও ভয় আছে।

১৩ বছরের শিশুটি গত প্রায় তিনটি বছর ধরে পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের এই অভিজ্ঞতা কেবল একাই বহন করছে। শিশু হিসেবে এই অবস্থা তার জন্য অনেক কঠিন বলে মনে করেন মনঃচিকিৎসকরা। জন্মের পর ১০ বছর পর্যন্ত শিশুটি নারী হিসাবেই বেড়ে ওঠে। নারীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি তখনও অব্যাহত ছিল। পোশাক, চলাফেরায় তখন কোনোকিছুই ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। কিন্তু এখন পরিবর্তন স্পষ্ট। ছেলেদের পোশাক, চলা-বলায় বদলে গেছে সে।

লোপার লিঙ্গ পরিবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড় তার বাড়িতে। সবার সঙ্গে কথা বলছে সে। তার শৈশবের প্রার্থনা, নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য তার ব্যাকুলতার গল্প শুনছে অনেকে। নিজের জীবনের এই পরিবর্তন শিশুটি বেশ উপভোগ করছে।

কিন্তু চিন্তিত তার মা। আরও দুটি অপারেশনের জন্য ৮-১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এতো টাকা সংগ্রহ করার উপায় যে তার নেই। শেষ পর্যন্ত টাকা জোগাড় না হলে তার প্রিয় সন্তানটির জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর