রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫ ।। ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১২ জিলহজ ১৪৪৬


কোরবানির চামড়া নিয়ে হতাশাই নিয়তি মাদরাসাগুলোর!


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি

গত বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে চরমভাবে হতাশ দেশের কওমি মাদরাসাগুলো। এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের খরচ যোগাতে অনেকটা বাধ্য হয়ে মাদরাসাগুলো চামড়া কালেকশনের ধারা চালু রেখেছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটা পরিকল্পিতভাবে পাশের দেশকে সুবিধা পাইয়ে দিতে দেশের চামড়া শিল্পে ধস নামায় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছরই চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি হয়ে আসছে। এতে মাদরাসাগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।  

এবার নতুন অন্তর্বর্তী সরকার চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। সরকারের আশ্বাসে মাদরাসাগুলোর কর্তৃপক্ষও আশাবাদী হয়ে ওঠে। সবার ধারণা ছিল, এবার অন্তত চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে। এজন্য অনেকে এবার অনেকটা বাড়তি উৎসাহের সঙ্গে চামড়া কালেকশন করেন। কিন্তু দিনশেষে এবারও হতাশ হলেন মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা। সংগৃহীত চামড়ার যে দাম তারা পেয়েছেন তা প্রত্যাশিত ছিল না কোনো মতেই। এতে অনেকেই বলছেন, কোরবানির চামড়া নিয়ে হতাশাই নিয়তি মাদরাসাগুলোর।  এভাবে চলতে থাকলে কোরবানির চামড়া কালেকশন নিয়ে ভাবতে হবে বলেও মনে করেন তারা। 

এবার সরকার ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১৫০ টাকা। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

তবে বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। বিশেষ করে গরুর কাঁচা চামড়া আগের মতোই কম দামে বিক্রি হয়েছে। আর অন্যান্য বছরের মতো এবারও ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাননি অধিকাংশ আড়তদার।

রাজধানীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। ছোট চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বছরও দাম ছিল প্রায় একই রকম। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচ থেকে ১০ টাকায়। 

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও চামড়া ছিল অনেকটা ফেলনা বস্তুর মতো। বেশির ভাগ কোরবানিদাতা মৌসুমি ক্রেতাদের সাড়া না পেয়ে পুরো চামড়া কোনো মাদরাসায় বা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করে দিয়েছেন। বিভিন্ন মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং যে চামড়া সংগ্রহ করেছে সেগুলোও সরকার নির্ধারিত দামের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।

আড়তদাররা বলছেন, একটি চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচ মিলে প্রায় ৫০০ টাকা পড়ে। সেই সঙ্গে ট্যানারি মালিকেরা ২০ শতাংশ বাদ দেন, ফলে অধিক দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয় না।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে কেনার সুযোগ নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়টি মাথায় রাখেন না। এ কারণে অনেক সময় তারা লোকসান দেন।

চামড়ার দামে খুশি নন কোরবানিদাতারাও। রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বাহাউদ্দিন জানান, তাদের আড়াই লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ৬০০ টাকা বলেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পরে তারা পাশের মাদরাসায় পুরো চামড়াটি দান করে দেন। 

মালিবাগের একটি মাদরাসার পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিনভর ছাত্র-শিক্ষকের পরিশ্রমে তিনশ চামড়া তারা সংগ্রহ করেছিলেন। পোস্তায় বিক্রি করতে নিয়ে গেলে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। পরে বাধ্য হয়ে সেই দামেই বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তিনি জানান, এত কম দাম হবে জানলে তারা এবার চামড়া কালেকশন করতেন না। 

পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ী সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় তারা কিনছেন। তার ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ