পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মিলে মোট ২০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী মাঠে নামাচ্ছে।

বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য দুই সিটির পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার পলিব্যাগ ও বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া জানান, ডিএসসিসি এলাকায় কোরবানির পশুর হাট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন তদারকিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোরবানির পশু জবাই থেকে শুরু করে বর্জ্য অপসারণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ডাম্প ট্রাক, মিনি ট্রাক, পে-লোডার, কনটেইনার ক্যারিয়ার, পানির গাড়ি, এক্সেভেটরসহ অসংখ্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, এ বছর দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৩০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য সৃষ্টি হবে। এসব অপসারণে ৫ হাজার ৯৫৩ জন নিজস্ব কর্মী, প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৭০০ জন এবং পশুর হাটে কর্মরত ১ হাজার ৮০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মীসহ সর্বমোট প্রায় ১০ হাজার ২৬৭ জন নিয়োজিত থাকবে।

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ১৬টি পে-লোডার, ৫টি টায়ার ডোজার, ৯টি পানির গাড়ি, ২টি বুলডোজার, ৪টি এক্সেভেটরসহ নানা ধরনের যান-যন্ত্র। রাস্তা ধোয়া ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে ২২২ গ্যালন স্যাভলন ও ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার।

হটলাইন নম্বর (ডিএসসিসি):
০১৭০৯-৯০০৮৮৮
০২২২৩৩৮৬০১৪

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, এবারের ঈদে উত্তর সিটিতে আনুমানিক ২০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য হবে। এর জন্য তিন দিনব্যাপী টানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

এ কাজে ডিএনসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োজিত থাকবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পে-লোডারসহ বিভিন্ন যান-যন্ত্রপাতি। বর্জ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার পলিব্যাগ, ২ হাজার ৫০০ বস্তা ব্লিচিং পাউডার ও ৪ হাজার ক্যান স্যাভলন।

ডিএনসিসির কন্ট্রোল রুমের ঠিকানা:
প্লট ২৩-২৬, সড়ক ৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন
হটলাইন: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬

ঢাকা উত্তরে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল এলাকায় কোরবানির বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য খনন করা হয়েছে দুটি পরিখা। কোরবানির বর্জ্য প্রথমে এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) এ এনে সেখান থেকে ডাম্পিং এলাকায় স্থানান্তর করা হবে।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগের দিন থেকে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে। হাটসমূহ দ্রুত পরিষ্কার করতে নিয়োজিত থাকবে ডাম্প ট্রাক, পানির গাড়ি, ভারী যান-যন্ত্র এবং ভাড়ায় আনা পিকআপ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরবাসীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং চালানো হচ্ছে। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে খুতবা ও নামাজের পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ চলছে।

এ ছাড়া কোরবানিদাতাদের জন্য বিনামূল্যে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করেছে ডিএসসিসি। পশুর হাটে অসুস্থ পশু শনাক্ত ও চিকিৎসায় গঠিত হয়েছে মেডিকেল টিম, যাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকেই।

রাজধানীতে ঈদের কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ ও পরিবেশ রক্ষায় দুই সিটি করপোরেশন অভূতপূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হলে নাগরিকদেরও সচেতন ও সহযোগিতাপরায়ণ হওয়া জরুরি।

সূত্র: বাসস

এসএকে/