বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

একক না যৌথ পরিবার; সন্তানের জন্য কোনটা ভালো?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Happy family with several members in education process

তামিমা তানজিন : নানা কারণে যৌথ পরিবার অনেক কমে গেছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো এর অস্তিত্ব টিকে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সন্তানের সঠিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি প্রয়োজন? দেখা যাক বিচার-বিশ্লেষণে কী পাওয়া যায়।
যৌথ পরিবার
যৌথ পরিবারের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আছে, যেমন- একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোনদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সন্তানরা আদান-প্রদানের মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। ফলে মনের প্রসারতা ও উদারতা তৈরি হয়। খুব খারাপ সময়গুলোও সম্মিলিতভাবে আনন্দের সঙ্গে পার করতে শেখে বাচ্চারা। এ ছাড়া যৌথ পরিবারের সন্তানরা মানুষের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দেখে বড় হয়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি যৌথ পরিবারের সন্তানদের মধ্যে তৈরি হয় তা হচ্ছে ‘সহনশীলতা’। উল্লিখিত ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। হয়তো এই নেতিবাচক দিকগুলো আছে বলেই যৌথ পরিবার দিনকে দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে।
প্রথমত, একসঙ্গে থাকা পরিবারগুলোর কর্তাদের অর্থনৈতিক উপার্জন একই রকম হয় না। ফলে পরিবারের মধ্যে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ তৈরি হয়। যেসব যৌথ পরিবারে আয়ের উৎস এক, সেখানেও দেখা যায় কে কতটুকু শ্রম দিচ্ছে তার ওপর দৃষ্টিভঙ্গির ভেদাভেদ। এখানে দেখা যায় প্রাধান্য বিস্তারকারী পরিবারের ছেলেমেয়েরা এক ধরনের অহংকার এবং সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানরা এক ধরনের হীনমন্যতা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। এ ক্ষেত্রে আলাদা হওয়াই মঙ্গল।
দ্বিতীয়ত, একই সঙ্গে থাকা মানুষের মধ্যে যদি অতিমাত্রায় নেতিবাচক মনোভাব যেমন- হিংসা, প্রতিযোগিতা, কুটনামি, পিছু লেগে থাকা, সন্দেহ, ঝগড়াঝাটি ইত্যাদি দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে আলাদা হওয়ার সময় হয়েছে। তৃতীয়ত, যৌথ পরিবারে অনেক সময় বড়দের দ্বারা (বয়সে বড়, অর্থনৈতিকভাবে বড়, প্রাধান্যের দিক দিয়ে বড়) ছোটরা বিভিন্ন ধরনের লাঞ্চনা-বঞ্চনার শিকার হয়। তা হতে পারে মানসিক কিংবা শারীরিক। বিশেষ করে মেয়েসন্তানরা যৌন অপব্যবহারের শিকার হয়ে থাকে।
একক পরিবার
একক পরিবারে মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যেই আবেগের গণ্ডি তৈরি হয় ও সীমাবদ্ধ থাকে। পরিবারের যতটুকু সুযোগ-সুবিধা, পুরোটাই সন্তান পায় আবার যতটুকু অসুবিধা বা সমস্যা পুরোটাই সন্তানকে মেনে নিয়ে বড় হতে হয়।
১. একক পরিবারের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই এক ধরনের একাকিত্বে ভুগতে দেখা যায়। যেমন- বাচ্চাটি দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় বাড়ির বুয়ার সঙ্গে; এ ছাড়া থাকে ড্রাইভার, দারোয়ান ও বাড়ির কেয়ারটেকারের সঙ্গে।
২. পরিবার বলতে আমাদের সন্তানরা যা বুঝবে, বড় হয়েও সে তাই পরিচর্যা করবে। ‘বাবা তাঁর মা-বাবা-ভাইবোনদের থেকে আলাদা হয়েছে, আমিও হব’- এ ধরনের শিক্ষা বাচ্চারা পরিবার থেকেই পায়।
৩. একক পরিবারের মধ্যে মা-বাবার মাঝে দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে তাঁরা সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হন। একক পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সামাজিকতার শিক্ষাটিও তুলনামূলকভাবে কম হয়।
এক্ষেত্রে করণীয়
১. আপনার সন্তান একক কিংবা যৌথ যেকোনো পরিবারের সদস্য হোক না কেন, সে তার মা-বাবার কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে কি না লক্ষ করুন।
২. কখনোই সন্তানকে আত্মীয়দের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেবেন না, বড় হয়ে নিজেই বুঝে নেবে।
৩. লক্ষ করুন, আপনার সন্তানটি পরিবারের আর পাঁচ-দশটি মানুষের সঙ্গে মিশে যা শিখত, যতখানি হাসিখুশিভাবে বেড়ে উঠত, আপনি একা কি তা পারছেন?
৪. পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন এখনই যৌথ পরিবার থেকে বের হয়ে একক হবেন কি না। সময় নিন, কেননা পরিস্থিতির পরিবর্তন আসে, আমাদের সহনশীলতা, মোকাবিলা করার ক্ষমতা ও বুদ্ধির পরিপক্বতা- সব কিছুই পরিবর্তিত হয়। এগুলো কাজে লাগান। আসলে যে মা-বাবা যৌথ পরিবারে ভালো ছিলেন না তিনি একক হওয়ার পর ভালো থাকবেন- তাও বলা যায় না। ভালো থাকতে জানতে হয়।
ইউনিভার্সালি বা এক কথায় বলা যাবে না যে একক পরিবার ভালো, বা যৌথ পরিবার। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ ও পরিবেশ দরকার। একক বা যৌথ দুটোর কোনোটিতে চমৎকার বেড়ে ওঠা যাবে সেটাও সুনির্দিষ্ট বলা ঠিক যাবে না। আপনি আপনার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।

লেখক : চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র কনসালট্যান্ট, প্রত্যয় মেডিক্যাল ক্লিনিক


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ