বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

শীতের রাজা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহদি হাসান সজিব

patho_shisuবড্ডো শীত শীতে লাগছে আজ। কুয়াশায় নজরে ভাসছে না আশপাশ। দূর্বাঘাসে শিশির ঝরছে বৃষ্টির মতো। ঝিরঝিরে বাতাস তো বইছেই। অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাঁটতে বেরোলেন মাহমুদ সাহেব। নইলে যে ডায়বেটিকসটা বেড়ে যায় তার৷

শহরের বড় ব্যবসায়ীদের একজন তিনি। এলাকায় বেশ নামডাক তার। চলতে চলতে এলেন দু'পথের বাঁকে৷ অচেনা পথে মোড় নিলেন খানিকটা৷ ভাবলেন এতো হেঁটেছি, এ পথে তো বাড়ানো হয়নি কখনও কদম। আজ এদিকটায়ই একটু এগোই৷

কিছুটা পথ হেঁটেই আরম্ভ হলো বস্তি৷ চোখে পড়লো খুপড়ির মতো ছোট্ট ছোট্ট ঘরবাড়ি। অদূরে একটি আলোর মতোন কিছু একটা জ্বলছে। কুয়াশায় নজরে আসছে না স্পষ্টভাবে৷ এগোলেন আরও অনেকটা৷ হু, তাইতো। ছোট্ট একটা ছেলে হাত-পা ছড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছে। বয়সটা বড়জোর সাত হবে। ফুলহাতার ছেঁড়াফাটা গেঞ্জি শরীরে। বেশ মায়া হলো মাহমুদ সাহেবের। এগিয়ে এলেন ছেলেটার কাছে।

বাবু, নাম কি তোমার?

ছোডন।

ছোটন?

জী! বাহ্, ভারী সুন্দর নাম তো! শীত লাগে বুঝি খুব?

শীতের দিনে কি মাইনষের গরম লাগে!?

তোমার আব্বু কী করেন?

নাই৷ আমি কোনোদিন দেহি নাই তারে৷ মাইনষের ধারে শুনছি খালি যে, একটা বিয়া কইরগা আমার মা'রে খ্যাদাই দিছে৷

তোমার আম্মু কোথায় এখন৷

আছে, এইহানেই৷ অসুখ অইছে। ঘুমাইতেছে ঐ কুইড়া ঘরে।

তোমাদের দিন চলে কীভাবে?

আমি প্লাস্টিক টোহাইয়া চাইল কিনগা আনি আর মা'র জন্য ওষুধ৷ খাওন-দাওনডাও সাইরগা যায় এতে।

ততোক্ষণে চারপাশে আরও কয়েকজনকে আগুন পোহাতে দেখা গেলো। দরদে বুকটা চিনচিন করে ওঠলো মাহমুদ সাহেবের। কতো প্রকার না মানুষ রয়েছে এই পৃথিবীতে! কেউ থাকে অট্টালিকায়, কেউ বা শান্তি খোঁজে গাছতলায়। আরও ক'জনের হালত শুনবেন বলে ভাবলেন। কিন্তু হিম্মতটা হলো না অার৷ শুনেই বা লাভ কি! দুঃখ বাড়বে বৈ কমবে না তো।

অগত্যা বাসার পথটাই বেছে নিলেন তিনি।

পেছন থেকে ছোটনের গেঁয়ো স্বরটি ভেসে এলো হঠাৎ৷

‘আঙ্কেল! আমারে একখান কম্বল দেবেন? রাইতে ঘুমাইতে পারি না শীতে৷'

পেছন ফিরে তাকালেন৷ ওর চোখে চোখ রাখতেই লা-জবাব হয়ে রইলেন৷ ভারী হয়ে ওঠলো তার কণ্ঠস্বর৷ কোনো কথা বেরোলো না আর তার মুখ ফুটে।

পর দিন পড়ন্তবেলা। খেলাধুলোয় মত্ত বাচ্চারা আর বুড়োরা গল্পে। একটা পিকআপ থামলো বস্তির সামনে। ভেতর-আসন থেকে বেরোলেন মাহমুদ সাহেব। গাড়িভর্তি নানান সাইজের গরম কাপড়। সাড়া পড়লো বস্তিতে। জমা হলো সবাই। বিতরণ করলেন একেক করে। ছোটনকে দিলেন একটু আলাদাভাবেই। আহ, উল্লাসে সে কী হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি ছোটনের! কী আনন্দ আজ ওর খুশির আকাশ-বাতাসে! যেনো বনে গেছে সময়ের শীতরাজা। জয় করে ফেলেছে শীতের রাজ্য৷

দৃশ্যটি নজর কাড়লো মাহমুদ সাহেবের। মনটা ভরে ওঠলো তার৷ খুশিতে চোখদুটো জলে সিক্ত হতে লাগলো ধীরে ধীরে৷

এমজে


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ