শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৪ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
যারা পালিয়ে গেছে, তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ গাজায় কমপক্ষে ৩১ ফিলিস্তিনি শহীদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ‘পরিস্থিতি বিপর্যয়কর’ হজ পারমিট ছাড়া হজ পালন না করার অনুরোধ: ধর্ম মন্ত্রণালয় নিজের অজান্তেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ভয়ঙ্কর দৃশ্য জুমার দিন যে আট আমল করবেন পাকিস্তানের ধাওয়ায় ভারতের বিমান বাহিনীর উপপ্রধানের চাকরি গেল আগামীকালের মহাসমাবেশে ট্রাফিক ও গাড়ি পার্কিং নির্দেশনা র-এর নথি ফাঁস! কাশ্মীর হামলায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ভারতে স্কুলের খাবারে সাপ, অসুস্থ শতাধিক শিশু ভারতের হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হাজারের বেশি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর জন্য মহানবীর (সা.) অনুশোচনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
কবি ও কলামিস্ট

মক্কা বিজয় হয়েছে। রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। মক্কার আশপাশে আরও কিছু বেদুইন গোত্র আছে, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য কয়েকজন সাহাবিকে ছোট ছোট সৈন্যদল দিয়ে পাঠালেন। কোনো হাঙ্গামা নয়, শুধু বলা হবে-মক্কা এখন ইসলামের করতলে। তোমরাও ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হও।

একটি সৈন্যদলের নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। কিছুদিন আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন। এখন তিনি ইসলামের সেনানী হিসেবে পরিচিত।

খালিদ রা. গেলেন মক্কার পার্শ্ববর্তী বনু জুজায়মা গোত্রের কাছে। তাকে দেখেই জুজায়মা গোত্রের লোকজন ভয় পেয়ে গেল। কেননা এর আগে খালিদকে তারা দেখে এসেছে কেবল রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে, শান্তির বাণী নিয়ে তিনি খুব কমই আসতেন। তাই তাকে দেখে জুজায়মা গোত্রের অনেকেই অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়ে গেল। খালিদ রা. তাদের অভয় দিলেন।

কিন্তু তার অভয়বাণীতে কাজ হল না, কিছু লোক ঠিকই তেড়ে এসে আক্রমণ করে মুসলিমদের। ফলশ্রুতিতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে জুজায়মার কয়েক ব্যক্তি নিহত হয় এবং হত্যাচেষ্টার দায়ে বন্দী করা হয় কয়েকজনকে।

দুই
জুজায়মা গোত্রের যেসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে সুদর্শন এক যুবকও আছে। গোত্রের সামনে অন্য অনেকের সঙ্গে তাকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মুসলিমদের হত্যাচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত সে।

যুবকটির হাত পিছমোড়া করে ঘাড়ের পেছনে নিয়ে বাঁধা। কোমর ও পা-ও রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, নড়াচড়ার শক্তি নেই। গোত্রের ডেরার আরেক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নারীরা। তাদের মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, শিশু এবং যুবতীরাও। সকলেই সন্ত্রস্ত।

আবু হাদরাদ আসলামি রাদি. এ অভিযানে খালিদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি পাহারা দিচ্ছিলেন জুজায়মা গোত্রের বন্দীদের। একসময় বন্দীদের মধ্য থেকে সেই সুদর্শন যুবকটি হাদরাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘হে নওজোয়ান, আমার কথা কি একটু শুনবে?’

হাদরাদ আসলামি বললেন, ‘বলো, কী চাই তোমার?’

যুবকটির গলা শুকিয়ে গেছে। একবার ঢোক গিলে গলা ভেজাবার চেষ্টা করে বলল, ‘তুমি আমার রশি ধরে আমাকে একটু ওই নারীদের কাছে নিয়ে যেতে পারবে?

ওখানকার কোনো একজন নারীর কাছে আমার কিছু বলবার আছে। কথাগুলো বলা শেষ হলেই তুমি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো। তারপর আমার সঙ্গে তোমাদের যা ইচ্ছা হয় তাই করো। আমার এ অনুরোধটুকু রাখবে?’

হাদরাদ আসলামি প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বললেন, ‘এ আর এমন কী কাজ! এ তো সামান্য অনুরোধ; চলো, তোমাকে নিয়ে যাই ওখানে।’

হাদরাদ আসলামি যুবকের কোমরের রশি ধরে তাকে নারীদের সামনে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে যুবকটি হুবাইশা নামের নির্দিষ্ট একজন যুবতীর দিকে তাকিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে গেয়ে উঠল কয়েক পঙক্তি কবিতা:

শান্তিতে থাকো আমার হুবাইশা,
শেষ হয়ে এল জীবনের বেলা।

হুবাইশা, যখনই তোমাকে খুঁজেছি নিরালায়,
কখনো পেয়েছি হওয়ানিকে কখনো পেয়েছি হিলায়।

যে প্রেমিক নিশিথ অন্ধকারে কিংবা খরাতপ্ত দুপুরে কষ্ট করেছে বরণ,
সে কষ্টের বিনিময় কি তার প্রাপ্য নয়? নাকি এই অবেলায় মরণ?

একত্রে ছিলাম যখন, বলেছি তোমায়-আমি অপরাধী নই, হে হেম!
মরণ আসার আগেই এই অভাগা আর কিছু নয়, চায় প্রেম।

তোমার দেয়া গোপন সে উপহার কাউকে দেখাইনি, জেনে নিও
তোমাকে দেখার পরে আর কোনো নারী আমার চোখে হয়নি প্রিয়।

অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখে যুবকটি কবিতা আবৃত্তি করছিল। যে নারীর জন্য এই সঘন কবিতা, এবার এগিয়ে এল সেই হুবাইশা। প্রেমিকের ব্যাকুল বন্দনায় সেও আবৃত্তি করল দুই পঙক্তি:

খোদার দোহাই, তোমার জীবনের পঁচিশটি বছর,
প্রেম দিয়েই দেয়া হয়েছে প্রেমের প্রত্যুত্তর।

হয়তো এরপর আরও কিছু বলার ছিল। কিন্তু সময় ফুরিয়ে এল। খালিদ রাদি.-এর নির্দেশে হাদরাদ আসলামি যুবককে হুবাইশার সামনে থেকে নিয়ে আসেন। এবং কিছুক্ষণ পরই তরবারির আঘাতে তার ধর থেকে মাথা আলাদা করে দেন।

যুবকটির লাশ পড়ে রইল বধ্যভূমিতে। প্রেমিকের মৃত্যু দেখে তার প্রেমিকা হুবাইশা পাগলের মতো ছুটে এল। লাশের উপর উপুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল আর প্রেমিকের অবয়বে চুমু দিতে লাগল। এভাবে চিৎকার করতে করতে একসময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সেও প্রেমিকের বুকের উপর চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়ল।

আল্লাহর রাসুল সা.-এর কাছে যখন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদি. কর্তৃক বনু জুজায়মায় সংঘটিত এমন হত্যাকাণ্ডের খবর পৌঁছায়, তখন তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই হাত আকাশের দিকে উত্তোলিত করে বলতে থাকেন: ‘হে আল্লাহ! খালিদ ইবনে ওয়ালিদ যে কর্মকাণ্ড করেছে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এ হত্যাকাণ্ড থেকে মুক্ত!’

পরবর্তীতে খালিদ রাদি.-কে এ ঘটনার জন্য জবাবদিহি করতে হয় এবং তাকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করা হয়।

সূত্র : সিরাত ইবনে হিশাম (ইফাবা), তৃতীয় সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৫

আরও পড়ুন: ইমরান খানের হাত ধরে নতুন জোট সরকার


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ