বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইত্তেফাকুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়্যাহ কেরানীগঞ্জের শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত শাপলা ও পিলখানার বিচার দাবিতে জমিয়তের বিক্ষোভ মিছিল সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের ভারতকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করতে হবে: ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ হজযাত্রীদের সবধরনের সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ সৌদি যুবরাজের নারী কমিশন ইসলামিক চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করতে হবে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসলামী আন্দোলন আইসক্রিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলনের ঐকমত্য, কয়েকটিতে দ্বিমত কোনো সন্ত্রাসী যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে: আইজিপি

ইতিকাফের জরুরি মাসায়েল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাজমুল হাসান সাকিব।।

ইতেকাফ অর্থ স্থির থাকা, অবস্থান করা। পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে সাওয়াবের নিয়তে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া, অর্থাৎ- বড় গ্রাম বা শহরের প্রত্যেকটা মহল্লা এবং ছোট গ্রামের পূর্ণ বসতিতে কেউ কেউ ইতিকাফ করলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউই না করলে সকলেই সুন্নাত তরকের জন্যে গুনাহগার জবে।
রমজানের ২০ তারিখ সূর্যোস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফ এর সময়।

ইতিকাফ এর শর্ত সমূহঃ-

ইতিকাফ এর তিনটি শর্ত। যথা:- (১) এমন মসজিদে ইতিকাফ হতে হবে যেখানে নামাজের জামাআত হয়। জুম'আর নামাজ হোক বা না হোক। এ শর্ত পুরুষদের ইতিকাফের ক্ষেত্রে। মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে। (২) ইতিকাফ এর নিয়ত করতে হবে।
(৩) হায়েজ-নেফাস শুরু হলে ইতিকাফ ছেড়ে দিবে।

যেসব কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায় এবং কাযা করতে হয়ঃ- (১) স্ত্রী সহবাস করলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক, ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক। সহবাসের আনুষাঙ্গিক কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন, ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে ইতিকাফ বাতিল হয় না, তবে ইতিকাফ এর অবস্থায় তা করা হারাম।

(২) ইতিকাফ এর স্থান থেকে শরীআতসম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। শরীআতসম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাহিরে যাওয়া যায়; যেমন: সে মসজিদে জুম'আর জামাআত না হলে জুম'আর নামাজের জন্যে জামে মসজিদে যাওয়া, ফরজ বা সুন্নাত গোসলের জন্যে বের হওয়া ইত্যাদি। আর স্বাভাবিক প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়; যেমন: পেশাব-পায়খানার জন্যে বের হওয়া, খাদ্য-খাবার এনে দেয়ার লোক না থাকলে তা আনার জন্যে বের হওয়া, মসজিদের ভিতর উযুর পানির ব্যবস্থা না থাকলে এবং পানি দেওয়ার কেউ না থাকলে উযুর পানির জন্যে বাইরে যাওয়া।

-যে বাজের জন্যে বাহিরে যাবে সে কাজ সমাপ্ত করে সত্বর ফিরে আসবে, বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে কোন কথা বলবে না।
-গোসল ফরজ হওয়া ছাড়াও আমরা শরীর ঠান্ডা করার নিয়তে বা শরীর পরিস্কার করার নিয়তে সাধারণত যে গোসল করে থাকি, শুধু এরূপ গোসলেরই উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তবে কাউকে বলে যদি পথের মধ্যে পানির ব্যবস্থা করে রাখে বা পুকুর ইত্যাদি থাকে আর পেশাব-পায়খানা থেকে ফেরার পথে অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে জলদি ঐ পানি গায়ে-মাথায় ঢেলে বা ডুব দিয়ে গোসল সেরে চলে আসে, তাহলে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না।

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব জিনিস মাকরুহঃ-

(১) ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সাওয়াব হয় এই মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী।
(২) বিনা কারণে দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহে তাহরীমী। যেমন:- ক্রয়-বিক্রয় করা ইত্যাদি। তবে চূড়ান্ত জরুরত দেখা দিলে যেমন: ঘরে খোরাকী নেই এবং সে ব্যতীত কোন বিশ্বস্ত লোকও নেই- এরূপ অবস্থায় মসজিদে মাল-পত্র উপস্থিত না করে কেনা-বেচার চুক্তি করতে পারে।

ইতিকাফের মোস্তাহাব ও আদবসমূহঃ-

(১) ইতিকাফের জন্যে সর্বোত্তম মসজিদ নির্বাচন করবে। সর্বোত্তম মসজিদ হলো, মসজিদুল হারাম, তারপর মসজিদে নববী, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস, তারপর যে জামে মসজিদে জামাতের ইন্তেজাম আছে, তারপর মহল্লার মসজিদ, তারপর যে মসজিদে বড় জামাআত হয়।
(২) নেক কথা ব্যতীত অন্য কথা না বলা।

(৩) বেকার বসে না থেকে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, তাসবীহ্ তাহলীলে মশগুল থাকা উত্তম। ইতিকাফে খাস-নির্দিষ্ট কোন ইবাদত করা শর্ত নয়- যে কোন নফল নামাজ, যিকির-আযকার, তিলাওয়াত, দ্বীনি কিতাব পড়া, পড়ানো বা যে কোন ইবাদত মনে চায় করতে পারে। ইতিকাফ শুরু করার পর নিজের বা অন্যের জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনন্যোপায় অবস্থায় ইতিকাফের স্থান থেকে বের হলে গোনাহ্ নেই বরং তা জরুরী, তবে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে।

কোন শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে বা স্বাভাবিক প্রয়োজনে বের হলে ইত্যবসরে কোন রুগী দেখলে বা জানাযায় শরীক হলে তাতে কোন দোষ নেই।
পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফে বসা অথবা বসানো উভয়টা না-জায়েয ও গোনাহ্।

মহিলাদের জন্যে মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরূহে তাহরীমী। তারা ঘরে ইতিকাফ করবে। স্বামী থাকলে ইতিকাফের জন্যে স্বামীর অনুমতি গ্রহন করতে হবে। স্বামীর খেদমতের প্রয়োজন হলে ইতিকাফে বসবে না। শিশুর তত্বাবধান ও যুবতী কন্যার প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজন থাকলে ইতিকাফে না বসাই সমীচীন। মহিলাগণ নির্দিষ্ট কোন কামরায় বা ঘরের এক কোণে পর্দা ঘিরে ইতিকাফে বসবে। মহিলাদের জন্যে ইতিকাফের অন্যান্য মাসায়েল পুরুষদের মতই।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ