মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ওয়াজের মাঠে প্রশংসিত তরুণ ৩ আলেম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

উপমহাদেশের শত বছরের ঐতিহ্য ইসলামী জলসা বা ওয়াজ মাহফিল। আলোচকের সচেতন আলোচনায় এসব মজলিস কখনোহয়ে ওঠে ‘ইলমের দরস।’ আবার কারো অসতর্কতায় কল্যাণের এ আয়োজন রূপ নেয় কৌতুকের মঞ্চে।

আমাদের আজকের ফিচারে তুলে ধরবো এমন তিন তরুণ আলেমের নাম; যারা ওয়াজের মাঠে নিজেদের মেধা, সৃজনশীলতা, পরিশীলিতা ও বাগ্মিতার পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যেই লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

মুফতি আনিছুর রহমান আশরাফি। সরলভাষী এক তরুণ আলোচক। তিনি তার পরিশীলিত আলোচনায় তুলে ধরেন সমাজের নানা অসঙ্গতি ও উদাসীনতার কথা। অত্যন্ত দরদ ভরে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেন ইসলামের সৌন্দর্য্যের সঙ্গে। যুব সমাজের বে-খেয়ালের কথা স্মরণ করিয়ে সচেতন করেন পরকালের জীবন বিষয়ে।

ভালোবেসে তাকে অনেকেই বলে থাকেন ‘তরুণ কলবের ডাক্তার।’ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘ইউটিউব’এ তার ওয়াজগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়। ওয়াজ শুনে হেদায়েতের পথে আসা হাজারো মানুষ মন্তব্যের ঘরে জানায় নিজেদের অভিব্যক্তি। কিছু অভিব্যক্তি তুলে ধরা যাক-

মো: সাইফুল ইসলাম নামে একজন লিখেন, ‘এই ধরনের ওয়াজ শুনলে মনে অন্য কম এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যারা দুনিয়ার কাজে মত্ত থাকেন তাদের মনে একটু হলেও পরকালের চিন্তা- ভাবনা চলে আসে।’

মো: মিযানুর রহমান বিপ্লব নামে একজন লিখেন, ‘যতবার তার কথা গুলা শুনি, কলিজাটা কাইপা উঠে, আল্লাহ ওনাকে নেক হায়াত দান করুক। আমিন।’

মঈন উদ্দীন নামে একজন লিখেন, ‘আল্লাহু আকবার কতটা উম্মতের দরদী হইলে এত সুন্দর করে উম্মতকে বুঝাইতে পারেন আল্লাহ শায়েখের নেক হায়াত বাড়িয়ে দিক। আমিন।’ 

বিদগ্ধ এক তরুণ আলোচকের নাম মুফতি রেজাউল করিম আবরার। ফিকহে হানাফির উদীয়মান মুখপাত্র বলা যায় তাকে। ইলমের ছোঁয়ায় সুবিন্যস্ত উপস্থাপনা যেন তার স্বভাবজাত কাজ। শত বছর ধরে নানাভাবে, নানা অধ্যায়ে ফিকহে হানাফিকে হতে হয়েছে ‘মজলুম’। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে কথিত আহলে হাদিস শায়েখদের আচরণে বুঝা যাচ্ছিলো হানাফি মাজহাব ‘মরীচিকা’ ছাড়া কিছু নয়! কিন্তু ওলামায়ে দেওবন্দ তা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘ফিকহে হানাফি কোনো বালুর বাঁধ নয়। নয় মিছে মরীচিকা।’ আকাবিরদের দেখানো সেই পথ ও পন্থা ভালোভাবেই আঁকড়ে ধরতে পেরেছেন মুফতি রেজাউল করিম আবরার। কোরআন, হাদিস, ইজমা, কেয়াস আর ইলমে তারিখের ফুলঝুড়িতে বিভিন্ন বাতেল ফেরকাকে নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

মেধাবী এ আলোচক ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমান জনপ্রিয়। ইতোমধ্যে কিছু টকশোতে অংশ নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। বুঝিয়েছেন, সত্যের জয় সুনিশ্চিত। তার বিভিন্ন ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে দেখা গেছে শ্রোতাদের হৃদ নিঙড়ানো ভালোবাসার আবির। কিছু মন্তব্য তুলে ধরা যাক-

কামাল হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘হুজুরের ওয়াজ শুনে অনেক ভুল ভাঙছে। আল্লাহ তার হায়াত ও ইলমে বরকত দিক।’

সোহেল আহমদে নামে একজন লিখেছেন, ‘আহলে হাদিসদের বানোয়াট কথাবার্তা থামানোর জন্য আপনিই যথেষ্ট। আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি।’

মো: ফিরোজ নামে একজন লিখেছেন, ‘ইউটিউবে সার্চ দিয়ে আপনার আলোচনাগুলো খুজে খুজে শুনি। আমি মাদরাসায় পড়ছি। আপনার দেয়া দলিলগুলো কিতাব মোতাআলার সময়ও কাজে লাগে আমার।’

কথা বলবো আরেক বিজ্ঞ তরুণ আলেম মুফতি আরিফ বিন হাবিবকে নিয়ে। তার আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে অনেকে তাকে হাদিসের ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ও বলে থাকেন। এর কারণও আছে। দরদভরা খুতবায় আলোচনা শুরু করেন। কথা এগুতে থাকে সমাজের নানা বিষয় নিয়ে। কথা বলেন ঘণ্টাব্যাপী। কিন্তু এমন বিষয় তিনি আলোচনায় আনেন না বললেই চলে; যার সঙ্গে তিনি হাদিস-কোরআনের কোনো রেফারেন্স দেন না। প্রতিটি আলোচনাতেই তিনি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দলিলভিত্তিক কথা বলেন। মেধার স্বাক্ষর রাখেন জ্ঞানগর্ভ উপস্থাপনায়। হাদিসের কিতাবের নাম, পৃষ্ঠা নম্বর, হাদিস নম্বর যেন তার চোখে ভাসে। সাবলীলভাবে আলোচনায় ইতোমধ্যেই শ্রোতাদের মন জয় করেন এ আলেম।

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘ইউটিউব’এ তার ওয়াজগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়। মানুষ খুঁজে পায় ইলম ও  হেদায়েতের খোরাক। মন্তব্যের ঘরে তুলে ধরেন হৃদয় নিঙরানো অভিব্যক্তি। কিছু অভিব্যক্তি এখানে তুলে ধরা যাক-

মো: আলামিন তালুকদার নামে একজন লিখেন, ‘হুজুরের প্রত্যেকটি কথায় হাদিসের রেফারেন্স। হক্কানি আলেম তাহাকেই বলে। আল্লাহ তায়ালা হুজুরকে আরো দ্বিনের খেদমত করার তোফিক দান করুক। সাথে সাথে এলেমের তরোক্কি দান করুক।’ 

এখলাস মিয়া নামে একজন লিখেন, ‘এমন বক্তা ঘরে ঘরে জন্মায় না। এই হুজুর বাংলাদেশের সকল আলেমদের সেরা। উনার সাথে কোন লা মাযহাবী আহলে হাদিসের চেতনাবাজরা হাদিস-কোরআনের রেফারেন্স দিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। উনার কথাগুলা সম্পূর্ণ কোরআন হাদিস রেফারেন্স ভিত্তিক আলোচনা। উনি হচ্ছেন কওমি মাদ্রাসার একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।’

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘যারা ওয়াজ শুনতে পছন্দ করেন তাদেরকে বলছি এই হুজুরের ওয়াজ শুনেন মনটা অটোমেটিক শীতল হয়ে যাবে।’

সুবিন্যস্ত ও সৃজনশীল কাজ সবসময়ই প্রশংসার দাবি রাখে। ওয়াজের মাঠও এর ব্যতিক্রম নয়। উল্লিখিত তিন তরুণের ওয়াজ ও শ্রোতাদের অভিব্যক্তি আমাদের এটাই মনে করিয়ে দেয়।

ওয়াজের মঞ্চ হোক হেদায়ের বাতিঘর। মানুষ খুঁজে পাক ইসলামের শুদ্ধ আলো। উপমহাদেশে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম এ মাধ্যম স্থায়ী হোক শতাব্দীর পর শতাব্দী। আমাদের তরুণ ওয়ায়েজদের আদর্শ হোক মুফতি আনিসুর রহমান আশরাফি, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মুফতি আরিফ বিন হাবিবের মতো সচেতন আলেমগণ।

মনগড়া আলোচনা, বস্তাপচা কাহিনী, যাচ্ছেতাই কথাবার্তা আর স্বঘোষিত আল্লামা থেকে মুক্তি পাক ওয়াজের মঞ্চ। তারুণ্যের জোয়ারে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল হোক ইসলামের।

কেএল/এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ