বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

দুই শতাধিক মুরব্বি আলেমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বেফাকের মজলিসে আমেলার বৈঠক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
বেফাকের ১১ তলা ভবন, বেফাক লোগো

|| হাসান আল মাহমুদ ||
     চীফ রিপোর্টার

কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’র মজলিসে আমেলার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেস সামাদসগরে অবস্থিত বোর্ডটির নতুন ভবনে বেফাক সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান’র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক’র পরিচালনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় মজলিসে খাস কমিটির বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেসব বিষয়গুলোর পর্যালোচনা, অনুমোদন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আওয়ার ইসলামকে এ বিষয়ে বাদ আসর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডটির প্রধান পরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী

সভায় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা সালাহউদ্দিন (নানুপুরী পীর), মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা সাজেদুর রহমান, মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম (চরমোনাই), মুফতী মনসুরুল হক, মাওলানা জাফর আহমাদ (ঢালকানগর পীর), মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

এছাড়া, মজলিসে আমেলার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যগণ ও সারা দেশের উল্লেখযোগ্য কওমি মাদরাসার দুই শতাধিক মুহতামিম, আলেম ও পীর-মাশায়েখ।

সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরামের ঐক্য প্রক্রিয়ায় বেফাকের করণীয়-বিষয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বোর্ডটির সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান

বক্তব্যে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত আমেলার সদস্যগণের উদ্দেশে বলেন, প্রথমেই আমি আজকের মজলিসে আমেলার এই সভায় আপনাদের মোবারকবাদ জানাই। ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া হিসাবে দ্বীনি দায়িত্ব পালনে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে উম্মতের ফিকির নিয়ে অগ্রসর হওয়া উলামায়ে কেরামের কর্তব্য। আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা সে বিষয়ে সচেতন রয়েছেন এবং নিজ নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে চলেছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহর মেহেরবানীতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কওমী শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মজলিসে আমেলার সম্মেলনে মিলিত হওয়ার তওফীক দান করেছেন। জাতির যে কোন সংকট মুহূর্তে বেফাকের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ আলেম উলামা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সে হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতির উপর দু'য়েকটি কথা আরজ করতে চাই।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নতুন দেশে উলামায়ে কেরামের করণীয় বিষয়ে আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের একটি পট পরিবর্তন ঘটেছে। যার মূলশক্তি ছিল সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। দেশবাসী এক হলে বড় কিছু করা যায়। এ সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সাথে উলামায়ে কেরামের ঐক্য ছিল লক্ষ্যণীয়। এ পর্যায়ে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য সংহতিরও নজির সৃষ্টি হয়েছে। এক পর্যায়ে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তারা রাষ্ট্রসহ মৌলিক অনেক পর্যায়ে সংস্কার সাধন করবেন বলে উদ্যোগী হয়েছেন।

‘এ সংস্কার কাজে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা, সেটা দেখা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। নতুন গঠিত প্রতিটি কমিশনে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারে ইসলাম বিরোধী কোনো পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা না হয়, সেটা পর্যবেক্ষণ করা এবং সংবিধানসহ প্রতিটি কমিশনে উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অংশীদারিত্ব বহাল রাখা একটি কর্তব্য।’-মন্তব্য করেন তিনি

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আশা করি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। কারণ, পট পরিবর্তনের এমন মুহূর্তে শাসকরা ভুল করলে এই ভুলের মাশুল জাতিকে যুগ যুগ ধরে দিতে হয়। নতুন পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য যেমন বিজয়ী হয়েছে, তাকে ধরে রাখার জন্যও ঐক্য প্রয়োজন। বিশেষ করে দুনিয়াবি জয়ের তুলনায় আমাদের নিকট দ্বীনি বিজয়ের প্রচার প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং দেশের পরিস্থিতি যাই হোক, উলামায়ে কেরামের কাজ থেমে থাকবে না। পট পরিবর্তনে জাতি যে নতুন স্বপ্ন দেখছে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যেমন জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই, তেমনি ইসলামী কার্যক্রমের সফলতার জন্যেও উলামায়ে কেরামের ঐক্যের বিকল্প নেই।

বেফাক সভাপতি বলেন, এই মূহূর্তে উলামায়ে কেরামের নিকট আমার বিনীত আবেদন থাকবে, আসুন আমরা পরস্পরে ঐক্যবদ্ধ থাকি। দ্বীনি বিষয়ে পারস্পরিক মিল মহব্বত বজায় রেখে দ্বীনি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করি। উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য শক্তি অর্জন করা সম্ভব। তখন নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই ন্যায্য অধিকার আদায়ের টেবিলে শক্তি নিয়ে আমরা কথা বলতে পারব। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সে শক্তি আর থাকবে না। ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের জন্য অপেক্ষমান। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন না হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে স্থায়ীভাবে জনগণের মনে স্থান করে নেওয়া সম্ভব হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিখুঁত একটি শক্তি হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

‘মনে রাখতে হবে, সর্বাবস্থায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, আকাবিরে দেওবন্দ ও বাংলাদেশের শত বছরের শীর্ষ মুরব্বি উলামায়ে কেরামের মত-পথ, নীতি ও আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে।’-যুক্ত করেন তিনি

সমকালীন বাতিল শক্তির বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসমতে আম্বিয়া, আদালতে সাহাবা, আজমতে ফুকাহায়ে মুজতাহিদিন ও মুসলিহীনে উম্মত, শানে আয়িম্মায়ে আরবাআ, মাশায়েখে তরিকায়ে আরবাআ এবং খতমে নবুওয়তের সুমহান মর্যাদাসহ রদ্দে বাতিলের ঝাণ্ডাকে যে কোনো মূল্যে উজ্জীন রাখা চাই। নতুন বাংলাদেশ সংস্কারের সুযোগে বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থা, তথাকথিত লালনবাদ, নাস্তিক্যবাদ, ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটিকিউ, সর্বধর্মবাদ, পাশ্চাত্য বেহায়াপনা, উগ্র নারীবাদ ইত্যাদির অন্তর্ভুক্তি যেন না হতে পারে, এ বিষয়েও উলামায়ে কেরামকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি রাখতে হবে। মিশনারী অপতৎপরতা, বিদেশী এনজিওদের সন্ত্রাসী পদক্ষেপ বাংলাদেশের অখণ্ডতা বিরোধী যে কোনো কার্যক্রম ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

সর্বশেষ বেফাক সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, মোটকথা, আমরা উলামায়ে কেরামের সুদৃঢ় ঐক্য কামনা করি। নিজেরা এক ও নেক থেকে অন্যদের সাথে মোয়ামালা করা উচিত। বিচ্ছিন্নভাবে অন্যদের সাথে মোয়ামালা করলে নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সকলের সুদৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। আশা করি, আপনারা নিজেদের সুচিন্তিত মতামত পেশ করবেন।

প্রসঙ্গত, গত বছর (৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার) রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয় কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ১১তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলের পর মজলিসে আমেলার এটাই প্রথম বৈঠক।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ