|| বিশেষ প্রতিনিধি ||
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের চলমান সংলাপে দেশের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন রাখার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। সংলাপে অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি সহ আরও অনেক রাজনৈতিক দল ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজনের পক্ষে মত দেয়।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনায় অংশ নেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। আলোচনা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা তিনটি বিষয়— সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার সংবিধানে যুক্ত করলে কোনো আপত্তি নেই। তবে গণতন্ত্র যুক্ত রাখতে হলে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস যেটি ছিল সংবিধানে, এটি যুক্ত করতে হবে। এটি আমাদের পাশাপাশি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলেরও প্রস্তাব ছিল।’
তিনি আরও বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতায় সঠিক নয়। সেই সংবিধান জনগণের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়নি। এ জন্য অধিকাংশ দল এই মূলনীতি বাতিলের পক্ষে। সে জন্য বাহাত্তরের মূলনীতি বাদ দিয়ে নতুন মূলনীতি নিয়ে আসতে হবে।
খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচন ব্যবস্থায় অর্থ ও পেশিশক্তির দাপট বন্ধে স্থায়ী বন্দোবস্তের দাবি জানান।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের ষষ্ঠ দিনের আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, “মুষ্টিমেয় কিছু বামপন্থী দল, বিশেষ করে সিপিবি ছাড়া, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সংবিধানে ধর্মীয় মূল্যবোধ পুনঃস্থাপনের প্রস্তাবে একমত।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।” একই সঙ্গে প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বাতিল করে বিকল্প একটি নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। তার ভাষায়, এই কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), ও মহাহিসাব রক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকেও সংবিধানে ধর্মীয় মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমর্থন জানানো হয়। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীর মূলনীতি বহাল রাখতে চায়, যেখানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি রয়েছে।” তিনি আরও জানান, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি সংযোজনের পক্ষেও বিএনপি অবস্থান নিয়েছে।
সংলাপের এই ধাপে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান অনেকটা স্পষ্ট হলেও, মতানৈক্যের ক্ষেত্রগুলোতে এখনও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এমএইচ/