|| মাওলানা হানজালা বিন যুবায়ের ||
হজ আল্লাহর ঘরের টানে বুকের ভেতর জন্ম নেওয়া এক অদ্ভুত ভালোবাসার নাম। নারী-পুরুষ সবাইকেই এই ভালোবাসার ডাক একদিন বাজিয়ে ওঠে। তবে নারীদের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন আলাদা, একটু বাড়তি সতর্কতা, একটু বেশি মমতা। সব নিয়ম মেনে, সব শর্ত পূরণ করে যখন একজন নারী হজের সফরে বের হন, তখন আকাশের ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করে। আর একজন নারী যখন কাবার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলেন, তখন পুরো আকাশও যেন নীরবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
নারীর জন্য হজ ফরজ হওয়ার শর্ত
নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য তার স্বামী বা মাহরাম থাকা আবশ্যক।
মাহরাম বা স্বামী থাকা ছাড়াও হজের সম্পূর্ণ খরচ বহনের সামর্থ্য থাকতে হবে।
মাহরাম বা স্বামী ছাড়া নারীর হজে যাত্রা শরিয়তসম্মত নয়। তবে কেউ মাহরাম ছাড়া হজ করলে হজ আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু তিনি গুনাহগার হবেন।
হজের বিশেষ বিধান
নারীরা সেলাই করা কাপড় পরতে পারবেন; পুরুষদের মতো নির্দিষ্ট ইহরাম পোশাক পরার প্রয়োজন নেই।
ইহরামের সময় নারীরা মাথা ঢাকবেন, তবে চেহারা আবৃত করবেন না।
তালবিয়া (লাব্বাইক) পাঠের সময় নারীরা উচ্চস্বরে না পড়ে, নিঃশব্দে পড়বেন।
তাওয়াফের সময় পুরুষদের মতো ‘রমল’ (দ্রুতগতিতে বুক উঁচিয়ে হাঁটা) নারীদের জন্য সুন্নত নয়।
হজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া পুরুষদের জন্য সুন্নত; নারীরা ভিড়ের মধ্যে চেষ্টা করবেন না। নির্জনতা থাকলে চুমু দিতে পারবেন।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ওঠা পুরুষদের জন্য সুন্নত; নারীদের জন্য নির্জনতা না থাকলে তা সুন্নত নয়।
সাফা-মারওয়ার সবুজ চিহ্নের মাঝে দ্রুত হাঁটা পুরুষদের জন্য সুন্নত, নারীদের জন্য সাধারণ গতিতে হাঁটাই যথাযথ।
আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারতের পর যদি নারীদের ঋতুস্রাব শুরু হয়, তবে তাদের জন্য তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) জরুরি নয়।
ইহরাম খোলার সময় পুরুষদের মতো পুরো মাথা মুন্ডানো নারীদের জন্য নয়; বরং তারা আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ চুল কাটবেন।
কিছু শিথিলতা
মুজদালিফায় ভিড়ের কারণে অবস্থান করতে না পারলে নারীরা সরাসরি মিনায় চলে যেতে পারবেন; এতে কোনো দম (কুরবানির পশু জবাই) ওয়াজিব হবে না।
দিনের বেলায় কঙ্কর নিক্ষেপে ভিড়ের কারণে সুযোগ না পেলে নারীরা রাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারবেন। এটি মাকরুহ হবে না।
হজ চলাকালীন ঋতুস্রাব করণীয়
হজ শুরুর পর কোনো নারীর ঋতুস্রাব শুরু হলে, তাওয়াফ ও সায়ী বাদে অন্যান্য সব আমল যথানিয়মে সম্পাদন করবেন।
ঋতুস্রাব শেষ হলে তাওয়াফে জিয়ারত এবং সায়ী করে হজ সম্পূর্ণ করবেন।
আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারতের পর ঋতুস্রাব শুরু হলে বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফে বিদা) করা নারীদের জন্য জরুরি নয়। তবে রক্ত বন্ধ হলে বিদায়ী তাওয়াফ করে নিলে তা উত্তম।
লেখক: স্বত্বাধিকারী, মাবরুর এয়ার ট্রাভেলস
এসএকে/