চীনের প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বা গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই)। দীর্ঘদিন ধরেই এতে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়ে আসছে দেশটি। বাংলাদেশের বিগত সরকার এতে আগ্রহী না হলেও বর্তমান সরকারের এতে যুক্ত হতে আপত্তি নেই। তবে জিডিআইতে যোগ দেওয়া নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
গতকাল রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফরে চুক্তি সই নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোনো চুক্তি সই হবে না, এটা আমি নিশ্চিত। কিছু সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
জিডিআইতে বাংলাদেশ যুক্ত হচ্ছে কিনা– উত্তরে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটি এখনও নিশ্চিত নই, দেখি। এখানে যুক্ত হতে বাংলাদেশের কোনো আপত্তি নেই। আমরা জিডিআইতে যুক্ত হবো কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের ঘোষণা দেন। চীন বলছে, করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য জিডিআই। এতে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষা, যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ, দক্ষতা উন্নয়ন, সুনীল অর্থনীতিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জিডিআই কার্যকরে চীন ফ্রেন্ডস অব জিডিআই নামে একটি ফোরাম গঠন করেছে। এতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার।
কূটনীতিকরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিডিআইতে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানায় চীন। এ নিয়ে তারা একটি খসড়া সমঝোতাও দিয়েছিল। তবে যেহেতু চীনের এ উদ্যোগ নিয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে, ফলে তখন এতে যুক্ত না হয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করে ঢাকা।
অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার ২৫ দেশের জোট বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিতে ২৬ মার্চ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর চার দিনের এ সফরে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও ২৮ মার্চ বৈঠক হবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। সফরের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে গতকাল রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘আমরা এ সফর নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সফরে কিছু ঘোষণা আসতে পারে। এ নিয়ে এখনও আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। সফরটি অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করি।’
এ সফরের ফলাফল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি। এ সফর এই উদযাপনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ সফর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। আমাদের প্রত্যাশা, সফরটি সফল, ফলপ্রসূ ও মাইলফলক হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার এ সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সারাবিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে– এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সফর। আমরা চাই, সফরটি যেন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের জন্য ভালো কিছু হয়।’
আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে ষষ্ঠ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক আয়োজনে দিল্লিকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।
ইউনূস-মোদি বৈঠক নিয়ে দিল্লি এখনও কোনো উত্তর দিয়েছে কিনা– জানতে চাইলে গতকাল রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘না, কোনো উত্তর আসেনি।’
এ বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাংকক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। আর সম্মেলন শেষ করে ৪ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তাঁর।
এমএইচ/