চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা জানানো হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। তবে এতো দেরিতে নির্বাচন করার বিরুদ্ধে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের জোর দাবি করে আসছে। তবে এখন জানা যাচ্ছে ভিন্ন কথা, আর তা হলো- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনেও আপত্তি নেই বিএনপির।
গত মঙ্গলবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানা গেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
নির্বাচনের জন্য এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। যা নিয়ে ক্ষোভ আছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলে নির্বাচন ডিসেম্বরে না হয়ে আগামী জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে হলেও তেমন আপত্তি থাকবে না দলটির- এমনটাই জানা গেছে।
কেননা, বিএনপি মনে করে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সব ধরনের শঙ্কা যেমন কেটে যাবে, দেশও নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করবে। রাজনৈতিক দলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামী রমজানের আগে নির্বাচনের যে কথা বলা হয়েছিল, সেটাকেও ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল বিএনপি। কেননা দলটির মধ্যে এখনো নির্বাচন বানচালের অজানা শঙ্কা রয়েছে। তাই সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের মধ্য দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করতে চায় বিএনপি।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে ঐকমত্য তৈরিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোদী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং নির্বাচন বর্জনকারী বাইরের দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এ ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরির মাধ্যমে সরকারের ওপর পরোক্ষ ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ অব্যাহত রাখবে দলটি। কিছু বৈঠক আনুষ্ঠানিক, আবার কিছু বৈঠক অনানুষ্ঠানিক হচ্ছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ। ছয় দলীয় এ জোটের বক্তব্যকে বরাবরই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় বিএনপি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বৈঠকে চার থেকে পাঁচটি ইস্যু উত্থাপন করা হয়। বিএনপি এগুলোর কোনোটির সঙ্গে একমত হয়েছে, আবার কোনোটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।
বিএনপি সম্মত হয় যে শুধু নির্বাচন নয়, সংস্কার নিয়েও তাদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। এছাড়া বৈঠকে কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দলের অভ্যন্তরে নেতাদের আচরণ নিয়েও আলোচনা হয়। গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপিকে এসব বিষয়ে সঠিক বার্তা দেওয়ার পরামর্শ দেয়।
বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক এখন দুর্বল, তাদের গুরুত্বও কমে গেছে বলে মনে করে দলটি।
এছাড়া বিএনপি আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং সব দলেরই একমত যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, আব্দুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও তানিয়া রব ছিলেন।
এনএইচ/