বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬


অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলনের ঐকমত্য, কয়েকটিতে দ্বিমত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেই সংলাপে।  

বুধবার (৭ মে) বিকেলে এই সংলাপে মোট ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাথে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একমত হয়েছে। কিছু বিষয়ে দ্বিমত জানানো হয়েছে এবং কিছু বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

সংবিধান সংস্কারে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-

১. সংবিধানের মূলনীতিতে প্রস্তাবিত বহুত্ত্ববাদ বাদ দিয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২. প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের উভয়কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক পিআর  পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে নারীদের জন্য কোটা ব্যবস্থা তাদের জন্য অসম্মানজনক। এজন্য সকল পর্যায়ের নির্বাচনে নারী-পুরুষ সবাই সমান সুযোগ নিয়ে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। 
৩.    রাষ্ট্রপতিও সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সর্বোচ্চ দুই বার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
৪.    একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ প্রধান ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। 
৫.    আইন সভা ভেঙে যাওয়ার পর বা মেয়াদ শেষে অন্তবর্তী সরকার নয় বরং নির্বাচনকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। যেহেতু তাদের প্রধান কাজ হবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে-

১. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নিজস্ব জনবল এবং আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে।
২. নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে জবাবদেহিতার আওতায় আনতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন সরকারের সময়কালীন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন সম্পন্ন হতে হবে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে।
৪. সংসদের উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কোথাও কোন কোটা থাকবে না।
৫.    স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান ও মেয়র বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে নয়।

বিচার বিভাগ সংস্কারে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-

১. বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে কার্যকরভাবে স্বাধীন থাকবে। বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় থাকবে।
২. সকল পর্যায়ে আলাদা শরিয়া আদালত স্থাপন করতে হবে এবং মুসলমানদের বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার এবং পারিবারিক অন্যান্য বিষয়ে সুষ্ঠু বিচার ফায়সালার জন্য অভিজ্ঞ ইসলামী স্কলার নিয়োগ দিতে হবে।
৩. রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই কাউকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারবেন না। বরং এটাকেও একটি স্বচ্ছ নিয়মের আওতায় আনতে হবে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-

১. অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ বাতিল করতে হবে। উপনিবেশিক আমলের এই আইন সাধারণ নাগরিকদের জন্য অমর্যাদাকর।
২. যেহেতু বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা এবং স্বাধীন অতএব জেলা প্রশাসককে মেজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন নেই। জেলাগুলোতে জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট রয়েছে।
৩. প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যাবে না।
৪. জেলা পরিষদ বাতিল না করে বরং তা আরো কার্যকর করতে হবে এবং জনগণের সরাসরি পত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-

১. দুদককে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
পুলিশ সংস্কার বিষয়ে কমিশনের ১৫টি প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত। সঙ্গে আমরা আরো নয়টি প্রস্তাবনা সংযুক্ত করেছি।

সংলাপে ইসলামী আন্দোলন পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ এসহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফেজ মাওলানা হাসিবুর রহমান এবং দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে নেতুত্ব দেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বদিউল আলম মজুমদার, ডক্টর ইফতেখারুজ্জামানসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ