আবু তালহা তোফায়েল।।
ইসলামের দাওয়াত প্রচার প্রসার করার জন্যে এবং রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের অলিতে-গলিতে ইসলামের বিজয় কালিমা উড়াতে হলে শালীনভাবে কথা বলতে হবে। কেউ না বুঝলে তাকে বুঝাতে হবে। মাঠে মাইক ফাটিয়ে আমেরিকা আর দিল্লির মসনদ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেললেন, সরকারের গদি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেন, কিন্তু রাত পোহাতেই শুনতে পেলেন যে দ্বীনে ইসলামের পূর্বের অবস্থান থেকে আরও একধাপ পিছিয়ে গেলো; এমন মাইক ফাটিয়ে কোনো ফায়দা নেই, বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
গতকাল ২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ৯টায়, সিলেটের বৃহৎ শতাব্দীর প্রাচীনতম দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার বার্ষিক মাহফিলে, প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি ও হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মুহিউস সুন্নাহ মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ী উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন যে, সম্প্রতি দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখান থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বা কাউকে দোষারোপ করবো না; দোষ তো আমাদেরই, কারণ আমরা তাঁদেরকে বুঝাতে পারি না। ওরা (সরকার) ইসলাম সম্পর্কে জানেনা, বুঝেনা তাঁদেরকে বুঝাতে হবে, শালীনভাবে বুঝাতে হবে।
ওরা বুঝালে বুঝে, মেনে নেয়। কারণ যেকোনো ব্যপারে যৌক্তিক দাবী আমাকে কেউ বুঝিয়ে দিলে আমি নিজেও মেনে নেবো, তদ্রূপ সরকারকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে যৌক্তিক দাবীগুলো তাঁর কাছে উপস্থাপন কর, বুঝাও, অবশ্যই সে বুঝবে এবং মেনেও নেবে। অবশ্যই যে প্রকৃত মুমিন, ইসলামের উপর, ঈমানের উপর, মুসলমানদের উপর, মুহাম্মদ সা. এর উপর, আল্লাহর জাতের উপর কেউ আঘাত হানলে কষ্ট পাবে; জজবা চলে আসে। কিন্তু অতি জজবায় দ্বীনে ইসলামের দাওয়াতি কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব না। হযরত উমর রা. রাসুল সা. এর মাথা দ্বিখণ্ডিত করার জন্য এসেছিলেন, রাসূল সা. এর বিপরীতে তাঁর জন্য সিজদায় পড়ে অশ্রু ঝরিয়েছেন। এভাবেই ইসলামের প্রচার প্রসার করতে হবে।
মুহিউস সুন্নাহ মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ী আরও বলেন, কারও কানকথা শুনে কারও দোষারোপ, কুৎসারটনায় নেমে গেলাম, যাচাই না করে ফাসেক জিন্দিকের দু'কলম কানকথা লেখা দেখে কারও বিরুদ্ধে নেমে গেলাম; শুনে রাখো, আলেম হয়ে কানকথায় পাত্তা দিয়ে কুৎসা রটনা করছো, এর ফল ভালো হবে না। তিনি সম্প্রতি ভাষ্কর্য ইস্যু নিয়ে বলেন, যারা কাজ করে তাঁরা মাঠে ময়দানে চিল্লায় না, আর যারা মাঠেময়দানে মাইক ফাটিয়ে সবকিছু ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে ওরা কাজের কাজ কিছুই করে না।
ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে শত্রুপক্ষের সাথেও মুহব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গত ৫ ডিসেম্বর সরকারের কাছে ৫টি দাবী তোলে ধরছি, খুব শালীনতার সাথে তাঁকে বুঝিয়েছি। অলরেডি একটা মেনে নিয়েছে, বাকী ৪টা মেনে নিবে বলে আমরা আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ। তাঁদেরকে এভাবেই বুঝালে বুঝে এবং বুঝবেও।
তিনি অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে বলেন, ২০২০ সালে আমরা যেসব আলেম উলামাদের হারিয়েছি, তাঁরা ছিলেন আমাদের আকাবির, একেকজন মুকুটহীন বাদশাহ। তাঁদের শূণ্যস্থান কোনোকিছুর দ্বারাই পূরণ হবে না। এভাবেই দ্বীনের ঝাণ্ডা উঁচু করে রাখা বীর সেনানীরা চলে যাবে, ইলম ও আমলদারদের উঠিয়ে নেয়া হবে, আর এভাবেই একসময় কিয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।
তিনি পরিশেষে বিশেষত মাদ্রাসার তালাবা উলামাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক ইসলাহী কয়েকটি কথা বলেন, শব্দের পরিভাষা ঠিক করে কথা বলতে হবে। যে শব্দের সাথে ভিন্নধর্মীয় কোনো চরিত্র বা কাজ বুঝায়, এসব শব্দ পরিত্যাগ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, মাদ্রাসায় মুহতামীমকে মহাপরিচালক, অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল এসব শব্দে ডাকা হলে বুঝা যেতে পারে যে সে হিন্দু,ইয়াহুদী, খৃষ্টান, কুলি, মালিও হতে পারে। কিন্তু মুহতামিম বললে বুঝা যাবে একজন সুন্নতে নববীর আদর্শবাদী, ওরাসাতুল আম্বিয়া এবং ওরাসাতুল আম্বিয়াদের অবিভাবক। কুরানে এসেছে ‘ওলা তাকুলু রা-ইনা’
বেকার অহেতুক ছবি ধারণ ও ভিডিও ফুটেজ তৈরী করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অধিকহারে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা পরিত্যাগ করতে হবে।
-এটি