মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সিভিল ড্রেসে আসামি ধরতে পারবে না পুলিশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নতুন প্রস্তাব আসছে : আলী রীয়াজ নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে পরমাণু শক্তি কমিশনের সংবাদ সম্মেলন AAOIFI ও CSBIB এর প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবিতে খেলাফতের গণমিছিল কাল দুই কলেজ শিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৭ জন ঢামেকে নৈতিক শিক্ষা এখন কেবল মাদরাসায় পাওয়া যায় : ধর্ম উপদেষ্টা মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতা: শিক্ষকের সম্মান কোথায়? ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিশ্ব যেন উপেক্ষা না করে : প্রধান উপদেষ্টা

‘২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঋণনির্ভর ও অন্ত:সার শূণ্য’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দিয়েছেন, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংগৃহীত কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর–বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অতীতের মতো বৈষম্য, লুটপাটের দলিল এবং ঋণনির্ভর বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। অথচ এই বাজেটে তার কোনও সমাধান নেই। এ বাজেট আমলা ও লুটেরা নির্ভর।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বিশাল অংকের বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী গৌরববোধ করলেও সাধারণ জনগণ এর কতভাগ সুফল পাবে তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় কথার ফুলঝুরি ও মিথ্যা আশ্বাসে ভরা লোক দেখানে মনতুষ্টির নিষ্ফল প্রয়াস চালানো হলেও একথা স্পষ্ট যে, বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটেও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের লুটপাটের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে দুর্নীতিবাজ ও কালো টাকার মালিকেদের অবৈধ টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশ-বিদেশী লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বাজেটের বিশাল অংশ সরকারদলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের পকেটে যাবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন পীর সাহেব চরমোনাই। বাজেটে বরাবরের মত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখায় দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করা হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

চরমোনাই পীর বলেন, বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হবে। এই বাজেট আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে কোনও ভূমিকা নেবে না, বরং বৈষম্য বাড়াবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মেগা প্রকল্পসমূহের ধার মেটাতে ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে; অথচ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পই এখন অপ্রয়োজনীয়।

তিনি আরও বলেন, ঋণনির্ভর এই বিশাল ঘাটতি বাজেটের দায় মেটাতে হবে শেষ পর্যন্ত চরম দুর্দশায় থাকা সাধারণ মানুষকেই। ধার করে ঘি খাওয়ার এই বাজেটে খাদ্যপণ্যের ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতিতে পুড়ে মরা কোটি কোটি মানুষের জন্য কোনও সুখবর খবর নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে অতি আবশ্যক খাদ্যপণ্যের উৎপাদন আমদানি, বিপণন, বিক্রয় ও বণ্টনে সরকারের অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ বাজেটে দৃশ্যমান নয়।

এদিকে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ঋণনির্ভর এ বাজেটে সাধারণ জনগণের কোন কল্যাণ হবে না। প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে।

এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষকরে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে নিয়ে নিলে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাঁধাগ্রস্থ হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা।

বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। ঋণ নির্ভর বাজেটের কারণে জনগণের উপর জাতীয় ঋণের বোঝা দিন দিন বড় হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক দূরাবস্থার মতো হবে কিনা সে আশঙ্কা বাড়ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে জনগণ দিশেহারা। প্রস্তাবিত এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধে কোন ভূমিকা রাখবে না, বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। বিশাল বাজেটের কারণে জনগণের উপর করের বোঝাও বাড়বে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় ঘুষ-দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ ও সব ধরণের বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবী জানান।

-এটি


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ