বিশেষ প্রতিনিধি
মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। দেশের ইসলামি রাজনীতির পরিচিত মুখ। ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি। আরও নানা দায়িত্ব পালন করতেন। পাঁচ বছর আগে এই দিনে (১১ মে) তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। তাঁর মতো পোড় খাওয়া ইসলামি রাজনীতিবিদ দেশে খুব কম আছেন। এজন্য আজও তাঁর শূন্যতা অনুভব করে এই অঙ্গন।
একজন বড় নেতা হিসেবে যে দাপট ও ভাব থাকার কথা সেটা তাঁর ছিল না। রাজনীতির তর্জন-গর্জন করতে তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। একটি দলের শীর্ষ নেতা হওয়া সত্ত্বেও চলতেন খুবই সাদাসিধে। অপরিচিত কারও পক্ষে দেখে বোঝার উপায় ছিল না তিনি এতো বড় নেতা! সবার সঙ্গে এমনভাবে মিশতেন মনে হতো তিনি তাদের চেয়ে ভিন্ন কেউ নন। কথা ও আচরণে সারল্য, চিন্তার গভীরতা, দৃষ্টিভঙ্গির প্রখরতা, উদার ধ্যান-ধারণা এবং নির্মল ও মিষ্টি হাসি দিয়ে তিনি সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অনন্য শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। এমন ‘অজাত শত্রু’ রাজনীতিবিদ সচরাচর চোখে পড়ে না। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন ইসলামি রাজনীতির শুদ্ধপুরুষ।
মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী ১ মার্চ, ১৯৩৬ নরসিংদীর শিবপুর থানার অন্তর্গত পূর্ব সৈয়দ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. জোবেদা খাতুন। তাঁর বয়স যখন ছয় বছর, তখন মা-বাবা ইন্তেকাল করেন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর কোনো আপন ভাই-বোন ছিল না। ছিল না কোনো আপন চাচাও। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী কুমরাদী ফাজিল মাদরাসার হেড মাওলানা সিরাজুল ইসলাম রহ. তাকে কুমরাদী ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি করান। এক বাড়িতে লজিং থেকে শুরু হয় তার প্রাথমিক লেখাপড়া। লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য কারো কাছে হাত পাততেন না। প্রথমে সম্পত্তি বর্গা দিয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতেন। পরবর্তী সময়ে লেখাপড়া করার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
কুমরাদী ফাজিল মাদরাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম, ফাজিল পাস করেন।
ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কুমরাদী মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া করতেন। তারপর জগন্নাথ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাস করেন।
মাওলানা নেজামী একজন লেখক ও সাংবাদিকও ছিলেন। দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। তারপর দৈনিক শক্তি, পিপলস-সহ আরো বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। হাইস্পিড গ্রুপে স্টেনু গ্রাফার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আশির দশকে বাংলাদেশ শাইখুল ইসলাম আল্লামা আতহার আলী রহ. এর হাতে গড়া উপমহাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন। নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিয়ে ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। পরবর্তী সময়ে ইসলামি রাজনীতির প্রতিটি বাঁকে তিনি ভূমিকা রাখেন। সবশেষ মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ.-এর ইন্তেকালের পর তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এবং আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেন।
তখন দেশে করোনা মহামারির প্রকোপ চলছে। ২০২০ সালে ১১ মে, ১৭ রমজান ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে তিনি পরকালের যাত্রা শুরু করেন।
এসএকে/