মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৮ সফর ১৪৪৭


কলরব প্রতিষ্ঠার অজানা ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এনামুল করীম ইমাম

ছোটবেলা থেকেই গজল লিখতাম। এই সুবাদে মাদরাসার এক বড়ভাই (ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতা) একদিন পরিচয় করিয়ে দেন আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ.-এর সাথে। স্নেহ করতেন। উৎসাহ দিতেন। তাই পাগলের মতো ছুটে যেতাম তার কাছে।

আজাদ ভাই কাজ করতেন প্রত্যয় প্রোডাক্ট নিয়ে। কিন্তু চরম আর্থিক সংকটে পড়ে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন প্রত্যয় প্রোডাক্ট; কিন্তু আজাদ ভাইয়ের ছোটভাই সিরাজুল ইসলাম ক্রেতাদের সাথে যোগশাজোসে সব মালামাল দিয়ে অল্প কিছু টাকা নিয়ে ভেগে যায়। সবকিছু হারিয়ে নিঃস হয়ে পড়েন আজাদ ভাই।
বসারও কোনো জায়গা নেই। তখন তিনি কোনো এক অভিমানে দলীয় কার্যালয়েও খুব একটা যেতেন না। বসতেন সাংবাদিক এবিএম শেহাবদ্দিন শেহাব ভাইয়ের প্রজন্ম প্রকাশের অফিসে। না হয় ডিজাইনার নাজমুল হায়দারের ওখানে।

এক পড়ন্ত বিকেলে প্রজন্ম প্রকাশের অফিসে বসে আছি আজাদ ভাই, শেহাব ভাই, আরিফ ভাই (শেহাব ভাইয়ের বন্ধু ও জজকোর্টের এ্যাডভোকেট) ও আমি। শেহাব ভাই বললেন, আইনুদ্দিন এখন কী করবা?

আজাদ ভাই বললেন, কন তো ভাই কী করি? করার তো কিছু দেখি না! আবার কিছু তো করা লাগবেই।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে শেহাব ভাই বললেন, আসো! আমরা একটা শিশু-কিশোর সংগঠন করি। তুমি কাজ করবা। আর আমরা তোমাকে সাপোর্ট দেব।

আজাদ ভাই বললেন, আমার যে অবস্থা তাতে কখন যে দাঁড়াতে পারব তারই ঠিক নাই। আবার সংগঠন!

শেহাব ভাই হাসতে হাসতে বললেন, মনে কর সংগঠন তোমার ঠ্যাং। এর উপর ভর করেই তুমি দাঁড়িয়ে যাও। আজাদ ভাই আপনজনদের থেকে ক্রমাগত মার খেয়ে খেয়ে ভীষণ হাতাশাগ্রস্থ ছিলেন।

যাহোক, সংগঠনের নাম প্রস্তাব করার পালা। আজাদ ভাই বললেন, ‘সৃষ্টি’ নাম হতে পারে। আসলে ‘সৃষ্টি গ্রাফিক্স’ নামে আজাদ ভাইয়ের নামকাওয়াস্তে একটা প্রতিষ্ঠান ছিল। শেহাব ভাই বললেন, তাহলে এটা তোমার একক হয়ে গেল। অন্য নাম দেওয়া যাক। অনেকক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি হলো; কিন্তু নাম ঠিক হলো না।
আজাদ বললেন, আমাদের এই চিৎকার, চেঁচামেচি আর কলরবই শেষ। কামের কাম কিচ্ছু হলো না।

তখন শেহাব ভাই বললেন, আচ্ছা তোমার কথাই থাক, নাম হোক ‘কলরব’। এই তো কলরব। সবার কলরব। ওখানে বসেই কমিটি গঠন হলো :
চেয়ারম্যান : সাংবাদিক এবিএম শেহাবদ্দিন শেহাব।
ভাইস চেয়ারম্যান : এ্যাড. মাকসুদুল হাসান চৌধুরী আরিফ।
নির্বাহী পরিচালক : আইনুদ্দিন আল আজাদ।
পরিচালক প্রচার ও গণসংযোগ : এনামুল করীম ইমাম।

এগুলো শেহাব ভাই-ই করলেন। আমরা শুধু তাকিয়ে দেখলাম। আজাদ ভাই বললেন, আমার কিছু নাবালেগ পোলাপান আছে, ওদের রাখা যায় না? শেহাব ভাই বললেন, অবশ্যই রাখবা। তুমি তো ওদের নিয়েই কাজ করবা। আমরা তোমাকে সহযোগিতা করে যাব।

শেহাব ভাই ও আজাদ ভাই কাজে নেমে পড়লেন। আসলে কাজ দক্ষ মানুষকেই চায়। আজাদ ভাইয়ের পরিচয়ে কলরবের পরিচিত হতে লাগল। এগিয়ে যেতে লাগল কলরব।

এদিকে আমার রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে জামিআ রাহমানিয়া থেকে আব্বার কাছে বিচার দেওয়া হলো। আব্বা আমাকে লেখাপড়ায় মন দিতে বললেন। মাদরাসার প্রচণ্ড চাপের কারণে আমিও আস্তে আস্তে দূরে সরে গেলাম। তবে যখনই যেতাম সাঈদ আহমাদ, হুমায়ুন কবির শাবিব ও বদরুজ্জামানকে সবসময় আজাদ ভাইয়ের সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকতে দেখতাম। কলরব প্রতিষ্ঠা করতে ওদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা দেখে আমি অবাক হতাম। আজাদ বলতেন, ইমাম ভাই! এরাই আমার আবু বকর, উমর, উসমান ও আলি রাদি.।

ফারাগাতের পরে আমি ডেমরা এক মাদরাসায় খেদমত করতাম। সাঈদ আহমাদ, জাফর আহমাদ রাবি ও ইয়াসিন হায়দার ছিল আমার ছাত্র। অনেক সময় ওদের দেখেছি, নিজেদের হাতখরচের টাকা দিয়ে আজাদ ভাইকে সহযোগিতা করতে। সুতরাং কলরব প্রতিষ্ঠায় আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ.-এর যেমন অবদান আছে। তেমনি অবদান আছে সাঈদ আহমাদ, হুমায়ুন কবির শাবিব, বদরুজ্জামান, ইয়াসিন হায়দার, এনামুল করীম ইমাম, এবিএম শেহাবদ্দিন শেহাব ও মাকসুদুল হাসান চৌধুরী আরিফ ভাইয়ের।

বলতে পারেন, আপনি কেন কলরবে যান না? বিষয় হলো, আমার জীবনে আব্বার পরামর্শ ছাড়া আমি যা করেছি, তাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি আমাকে মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখিতে দেখতে চান। আমি এতেই আছি। অন্য কিছুতে নেই। আমার প্রতিটি বইয়ের প্রথম পাঠক, সমালোচক ও সংশোধক আমার আব্বা আলহাজ্ব রেজাউল করিম মোল্লা (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান)।

অনেক বেশি প্রয়োজন না হলে মাদরাসার বাইরে আমি সাধারণত যাই না। (আমার কাছের মানুষরা এটা জানে) তবে দূর থেকে দুআ ও শুভকামনা থাকে কলরবের জন্য। দুআ থাকে আমাদের প্রিয় আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ.-এর দারাজাত বুলন্দির জন্য।   

[আজ এ পর্যন্তই। সময় হলে আরও অনেক অজানা ইতিহাস নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে।]

লেখক: মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর, ঢাকা।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ