শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৫ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
এবার চা বাগানে ছবি তোলার সময় দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেলো বিএসএফ কর্মকর্তাদের মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর এখন মানুষ মন খুলে লিখছেন, সমালোচনা করছেন : প্রেস সচিব গাজায় ত্রাণ বহনকারী জাহাজে ইসরায়েলের হামলা কাশ্মীর হামলার পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব আগাগোড়া ইসলামবিরোধী: হেফাজতে ইসলাম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে খাদ্য মজুতের নির্দেশ হেফাজতের মহাসমাবেশ সফল করতে সাভারে মোটর সাইকেল শোডাউন গুম হওয়া মুফতি শাইখুল ইসলামের সন্ধান চায় তার পরিবার ‘দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক হওয়া উচিত’

মুসলিম সমাজের দুর্ভাগ্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী

ইসলামের আগমনের পূর্বে বিভিন্ন জাতি ও সমাজে নারীদের কোনো উত্তরাধিকার (সম্পত্তিতে অধিকার) ছিল না। তাদের বিশ্বাস ছিল, যেসব মানুষ শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে এবং জাতির রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে, কেবল তাদেরই সম্পত্তিতে অংশ পাওয়ার অধিকার ছিল। অর্থাৎ, শারীরিক শক্তি এবং যুদ্ধের ক্ষমতাকে জাতির মর্যাদা ও ক্ষমতার মূল উৎস হিসেবে ধরা হতো। তখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি কিছুটা সত্যও ছিল।

কিন্তু বর্তমান যুগ পরিবর্তিত হয়েছে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় যুদ্ধক্ষেত্রের তলোয়ারের ঝংকারে নয়, বরং শিক্ষা, গবেষণা এবং বিদ্যাপীঠের আলোয়। কোনো জাতি যদি জ্ঞান ও বিজ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকে, তাহলে জনসংখ্যা বেশি হলেও তাদের অবস্থান হয় ধূলিকণার মতো—যাদের পদদলিত করা হয়। এর উদাহরণ হলো: জাপান ও ভারত। ভারত জনসংখ্যা ও ভূখণ্ডে অনেক বড়, প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ। তবু জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণে জাপানের মতো দেশের সামনে ভারতকে সাহায্যের হাত পাততে হয়।

ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যা তার শুরু থেকেই শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) এমন এক সমাজে প্রেরিত হয়েছিলেন যেখানে নানা রকম কুসংস্কার, অশান্তি ও নৈতিক অবক্ষয় বিরাজমান ছিল। তখন মনে হতে পারে, ইসলামের প্রথম বাণী হওয়া উচিত ছিল আল্লাহর একত্ববাদের আহ্বান অথবা জুলুমের নিন্দা। কিন্তু আল্লাহ প্রথম যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা ছিল—‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।’

এই আয়াত প্রমাণ করে, ইসলাম সকল ভালো কাজের মূল হিসেবে জ্ঞানকে বেছে নিয়েছে। ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন, ‘জ্ঞান হলো আলো।’ যেমন, অন্ধকার ঘরে চোর-ডাকাত ও বিষধর সাপ অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে, তেমনি অজ্ঞতার অন্ধকারে সমাজ নানান অনৈতিকতায় ভরে যায়। কিন্তু একবার জ্ঞানের আলো জ্বলে উঠলে এসব দুর্বলতা ও অন্যায় আপনাআপনি দূর হয়ে যায়।

মক্কায় কঠিন সময়েও রাসুল (সা.) ‘দারুল আরকাম’ নামে একটি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনায় আসার পর, যখন মুসলমানরা গৃহহীন, খাদ্য-বস্ত্রহীন অবস্থায় ছিলেন, তখনও রাসুল (সা.) একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং তার সঙ্গে ‘সুফফা’ নামক একটি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। সেখানে মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়া হতো।

একবার বদরের যুদ্ধে বন্দি ৭০ জন কুরাইশকে মুক্তির শর্ত হিসেবে টাকা নয়, বরং ১০ জন মুসলমানকে শিক্ষাদান নির্ধারণ করা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে, রাসুল (সা.) শিক্ষাকে কতটা অগ্রাধিকার দিতেন—এমনকি যখন জাতি দারিদ্র্য, অভাব ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ছিল।

ইসলাম এমন কোনো জ্ঞানের বিরোধিতা করে না, যা মানবতার উপকারে আসে। এমনকি যদি সেই জ্ঞান অমুসলিমদের কাছ থেকেও আসে এবং তা আমাদের বিশ্বাস বা ধর্মীয় মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, তাও গ্রহণযোগ্য। রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের বিদেশি ভাষা শিখতেও উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি।

একজন মানুষ মারা যাওয়ার পরও তিনটি জিনিসের সওয়াব চলতে থাকে—তার মধ্যে একটি হলো: এমন জ্ঞান, যা তার পরেও মানুষকে উপকার দিয়ে যায়।

দুঃখজনকভাবে, যাদের হাতে প্রথম ‘কলম’ তুলে দেওয়া হয়েছিল, যারা শিক্ষা লাভের সর্বপ্রথম নির্দেশ পেয়েছিল, আজ তারাই অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ মুসলিম সমাজে অল্প বয়সী শিশুদের হোটেল বা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে দেখা যায়, অথচ তাদের চোখে-মুখে মেধার ঝলক ফুটে ওঠে।

যতদিন না মুসলিম সমাজের নেতা ও বিত্তবানরা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হবেন এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবসার বদলে ইবাদতের রূপে গ্রহণ করবেন, ততদিন পর্যন্ত মুসলিম সমাজ তাদের অতীত গৌরব ফিরে পাবে না।

[ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানীর লেখাটি অনুবাদ করেছেন: সাইমুম রিদা]

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ