ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনীতির সম্মুখভাগে চলে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি দীর্ঘদিন পর হারানো নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেয়েছে। প্রায় ১২ বছর পর সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ২০২৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে জামায়াত।
২৮টি নিবন্ধিত দলের হিসাব-নিকাশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির চেয়েও আয়-ব্যয়ে অনেক এগিয়ে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির চেয়ে দলটির আয় প্রায় দ্বিগুণ বেশি। আর ব্যয় করেছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
ইসি সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৮টি দল আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। যেখানে বিএনপির আয় দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। আর ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা। এছাড়াও ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা জমা রয়েছে।
জাতীয় পার্টি আয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা।
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয় করেছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৪ টাকা। গণঅধিকার পরিষদের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ৪ হাজার ৩০০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮ টাকা। এছাড়া বাকি দলগুলোর আয়-ব্যয় জামায়াতের চেয়ে অনেক কম।
ইসি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর আয় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা। সে হিসাবে সব দলের আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করলে শীর্ষ রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত ২০২৪ সালের পঞ্জিকা বছরে দলীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হয়েছে। সেই আর্থিক বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরে দলটির প্রারম্ভিক স্থিতি ছিল ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০১ টাকা। আর আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা। ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা। তবে দলটির কোনো ব্যাংক হিসাব নেই বলে জানানো হয়েছে আয়-ব্যয়ের এই বিবরণীতে।
কর্মী ও সদস্যদের চাঁদা থেকে জামায়াত আয় করেছে ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ১৬২ টাকা। কার্যনির্বাহী কমিটি অথবা উপদেষ্টা পরিষদের চাঁদা অথবা অন্যান্য চাঁদা ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৪৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যক্তি অথবা সংস্থার কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ টাকা। দলের পত্রিকা, সাময়িকী, বইপুস্তক বিক্রি থেকে আয় ৯ লাখ ১১ হাজার ২৯০ টাকা। অন্যান্য চাঁদা থেকে দলটি আয় করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ টাকা। মোট আয় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা।
কর্মীদের বেতন ভাতা ও বোনাসে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৩ টাকা। আবাসন ও প্রশাসনিক খরচ হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা।
বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৮ টাকা। ডাক, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস, পত্রিকা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৬ টাকা। আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬২ টাকা।
প্রচারণা ও পরিবহনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ টাকা। যাতায়াত বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। জনসভা, পথসভা, ঘরোয়া বৈঠকে ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৫ টাকা। প্রার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ টাকা।
ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠান বাবদ ব্যয় ৩২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫০ টাকা। অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯ টাকা।
এমএইচ/