ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এর আইনি দায় বহন করবে—বৃহস্পতিবার এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। এই মন্তব্য আসে সিএনএনের একটি প্রতিবেদনের পর, যেখানে বলা হয় ইসরায়েল হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে রোমে আজ শুক্রবার পারমাণবিক আলোচনার পঞ্চম দফা শুরু করবে।
তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ খুলে দিতে পারে, যদিও ইরান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানায়, ইসরায়েল এখনও হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং মার্কিন কর্মকর্তারা এ নিয়ে বিভক্ত মত পোষণ করছেন। এক চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে উদ্দেশ করে আরাকচি বলেন, ‘ইসরায়েলের যে কোনো দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং এই অবৈধ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
আরাকচি আরো জানান, যদি হুমকি অব্যাহত থাকে, তবে ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনা এবং উপাদান রক্ষায় ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নিতে বাধ্য হবে এবং সেই পদক্ষেপের কথা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে জানানো হবে।
যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, এপ্রিল মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একজন উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, তেহরান আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে পারে অথবা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ ও গোপন স্থানে সরিয়ে নিতে পারে। বৃহস্পতিবার এক পৃথক বিবৃতিতে ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভলিউশনারি গার্ডস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যদি হামলা চালায়, তাহলে তারা ‘ধ্বংসাত্মক ও চূড়ান্ত জবাব’ পাবে।
গার্ডস-এর মুখপাত্র আলিমোহাম্মদ নাইনী বলেন, ‘তারা আমাদের যুদ্ধের ভয় দেখাচ্ছে, কিন্তু তারা ভুল হিসেব করছে।
কারণ তারা জানে না যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র কী পরিমাণ জনসমর্থন ও সামরিক শক্তি একত্র করতে পারে।’
কূটনীতিকদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক আলোচনা ভেঙে পড়ে অথবা এমন কোনো নতুন চুক্তি হয়, যা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আশঙ্কা দূর করতে না পারে, তাহলে ইসরায়েল তার আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের ওপর হামলার দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আরাকচি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হয় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করা, তাহলে কোনো পারমাণবিক চুক্তি হবে না। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ইরানে সমৃদ্ধকরণে বিশ্বাস করেন না... এবং এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। যদি এটাই তাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে কোনো চুক্তি হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে একটি কনসোর্টিয়াম গঠনের ধারণা খারাপ নয়, কিন্তু তা ইরানের মাটিতে সমৃদ্ধকরণের বিকল্প হতে পারে না।
মঙ্গলবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবি তুলছে, তা অযৌক্তিক ও অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি।’ তিনি এও সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই আলোচনার মাধ্যমে কোনো চুক্তি আদৌ সম্ভব কি না।
তেহরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বেসামরিক লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। আরাকচি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা আছে, কিন্তু ইচ্ছা নেই।’ গত বছর এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যা অঞ্চলজুড়ে নতুন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
সূত্র : রয়টার্স
এসএকে/