সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ।। ১ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২০ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগরের মিডিয়া সেল গঠন ভোলায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওয়ার্ড সভাপতির কব্জি কর্তন ‘তরুণদেরকে ইসলামি জীবনের দিকে আহ্বান করা বড় প্রয়োজন’ ইসরায়েল সুরক্ষা জোট ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে ব্যর্থ খাগড়াছড়িতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নির্ধারণে মতবিনিময় সভা সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করলে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের ঘোষণা  নতুন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ঢেউ ও নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে হামলার খবর নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না: আব্দুর রব ইউসুফি ২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ ঘোষণা করল সৌদি  ইরান থেকে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি ইসরাইলের

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন: হজরত বেলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রতিবেদন: OUR ISLAM ডেস্ক

ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম—হজরত বেলাল (রা.)। তিনিই ছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রথম মুয়াজ্জিন, যিনি সর্বপ্রথম আযানের মাধ্যমে মানুষকে নামাজের জন্য আহ্বান করেছিলেন। কেবল আযানদাতা হিসেবেই নয়, বরং একজন অবিচল ঈমানদার, সাহসী সংগ্রামী এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় সাহাবি হিসেবে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

হজরত বেলাল (রা.) ছিলেন আফ্রিকার ইথিওপিয়ান বংশোদ্ভূত। কুরাইশদের এক নির্দয় নেতা উমাইয়া ইবনে খালাফের দাস ছিলেন তিনি। তখনকার সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ ও দাসদের কোনো মর্যাদা ছিল না। কিন্তু ইসলাম সেই চিরাচরিত প্রথা ভেঙে দিয়েছে।

ইসলাম গ্রহণের পর হজরত বেলাল (রা.)-এর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে। তাকে রুক্ষ মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে ফেলে রেখে বুকের ওপর বিশাল পাথর চাপিয়ে দেওয়া হতো। কাফেররা তাকে বলতো, “তোমার ধর্ম ছেড়ে দাও!” কিন্তু তিনি সব নির্যাতন সহ্য করে উচ্চারণ করতেন—“আহাদ, আহাদ

এই ঈমানদারী ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হন রাসুলুল্লাহ (সা.)। পরে হজরত আবু বকর (রা.) তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি ছিল স্বাধীনতার একটি মহান মুহূর্ত।

মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানরা নামাজের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আহ্বান পদ্ধতির প্রয়োজন অনুভব করেন। তখন নবীজী ﷺ স্বপ্নে আযানের ধ্বনি শোনেন এবং হজরত বেলাল (রা.)-কে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেন।

তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি নবীজির ﷺ নির্দেশে "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার..." ধ্বনিতে মানুষকে নামাজের প্রতি আহ্বান জানান।

তার আযান ছিল হৃদয়বিদারক, আবেগময় ও ঈমান জাগানিয়া। অনেক সাহাবি বলেন, আযানের সময় বেলালের কণ্ঠে যেন জান্নাতের সুগন্ধ মিশে যেত।

রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, একবার নবীজি বলেন:

“হে বেলাল! আমি স্বপ্নে জান্নাতে তোমার পায়ের শব্দ শুনেছি। (সহিহ বুখারি)

এ হাদিস প্রমাণ করে, হজরত বেলাল (রা.) ইসলামের এমন এক উচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছিলেন, যা অনেক আরব অভিজাতও পাননি। ইসলামে বংশ নয়, বরং তাকওয়া ও আমলের ভিত্তিতে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়—এটাই তার জীবনের অন্যতম বার্তা।

রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে হারানোর পর হজরত বেলাল (রা.) আর মদিনায় থাকতে পারেননি। দুঃখে-বিদায়ে ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি সিরিয়ায় চলে যান। একবার স্বপ্নে রাসুল ﷺ-কে দেখে তিনি আবার মদিনায় ফিরে আসেন এবং সেখানে একটি আযান দেন। সেই আযান শুনে গোটা মদিনা কান্নায় ভেঙে পড়ে—তাদের চোখে তখন শুধু বেলালের কণ্ঠে ভেসে আসা রাসুলের স্মৃতি।

হজরত বেলাল (রা.)-এর জীবন হলো ত্যাগ, ঈমান, সাহস ও মর্যাদার এক উজ্জ্বল আদর্শ। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, গায়ের রঙ বা বংশ নয়—একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হয় তার ঈমান ও আমল দিয়ে।

আজও প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বেলাল (রা.) কেবল একজন মুয়াজ্জিন নন, বরং এক অমর সাহস ও ঈমানের প্রতীক।

সূত্র: সহিহ হাদিসসমূহ, ইবনে কাসীর, সীরাত গ্রন্থাবলি ও ইসলামিক ইতিহাস বিষয়ক নির্ভরযোগ্য উৎস।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ