শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫ ।। ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১১ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :

কুরবানির গোশত বিতরণে চাই মানবিকতার পুনর্পাঠ 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী

আসছে ঈদুল আজহা। কুরবানির ঈদ। মুসলিম উম্মাহর আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আসে দিনটি। সময়ের আবর্তনে  প্রতিবছরই এ দিনটি আমাদের কাছে আসে। কারো কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। কারো কাছে আসে বিষণ্নতার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।

এভাবেই কেটে যায় সময়। সময়ের কাছে অসহায় মানুষগুলোর দীর্ঘশ্বাস আর না-বলা গল্পগুলো হারিয়ে যায় দূর অজানায়। কখনো হৃদয় ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা অব্যক্ত যন্ত্রণারা বিদ্রোহ করে বসে। অবশেষে নিদারুণ কষ্টে দুর্ভাগ্য বরণ করে ইতারে মিলিয়ে যায়।

আপনি যখন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের শত আবদার মিটিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসে, তখন পাশের বাড়ির নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটি ছোট্ট মেয়েটির একটি নতুন কাপড়ের বায়না মেটাতে রীতিমতো গলদগর্ম। নিম্নবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর দিকে একটু তাকান। দেখুন, কতটা অসহায়ভাবে কাটছে তাদের প্রতিটা দিন। তাদের গল্পগুলো শুনুন, কতটা বিষণ্নতায় কাটছে তাদের প্রতিটা প্রহর। কিসের ঈদানন্দ! দৈনন্দিন খাবার জুটানোই যেখানে দুঃসাধ্য।

ইবরাহিমি সুন্নাহয় উজ্জীবিত হয়ে প্রতিবছর সামর্থবান মুসলমানরা পশু কুরবানি করে থাকে। সাধারণত পরম আবেগ আর উদ্দীপনা নিয়েই বরকতময় এ কাজে তারা অংশগ্রহণ করে। অতঃপর শরীয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী (অবশ্যই এটি মুসতাহাব পর্যায়ের নির্দেশনা) কুরবানির গোশতকে তিনভাগে ভাগ করে থাকে। একভাগ নিজ পরিবার পরিজনের জন্যে, আরেক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্যে এবং আরেক ভাগ গরিব মিসকিনদের জন্যে। সর্বশেষ ভাগটি নিয়েই কিছু কথা।

আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহে আজ আপনি সামর্থ্যবান।কুরবানি করার সক্ষমতা রাখেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনি প্রতি বছর কুরবানি করেও থাকেন। অথচ আপনার মত অনেক মানুষ এমন আছে যারা কুরবানি দূরে থাক-জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোই মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খায়। দুমুঠো খাবার জুটানোই যাদের জন্যে ভীষণ দায়। গোশত দিয়ে উদরপূর্তি তো বহুত দূর কি বাত।

ইসলাম ও মানবিকতার মৌলিক দাবি হচ্ছে, সারা বছর যারা এক টুকরো গোশতের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না, পরম মমতায় তাদের মুখে মজাদার গোশত উঠিয়ে দেওয়া। তাদের দ্বারে দ্বারে ভালবাসার এ পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। গলাগলি করে ঈদানন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া।

কিন্তু না, নানাবিধ ব্যাস্ততায় আপনি তাদের কাছে যেতে পারলেন না। তারাই দলবেঁধে আপনার দুয়ারে এসেছে। ছোট্ট শিশু, যুবক বৃদ্ধ – অনেকেই আপনার গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি প্রথমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কারণ, আপনার দরকার ছিল তাদের কাছে যাওয়ার। কিন্তু পারেননি। তাই ইস্তেগফার করুন। অতঃপর শুকরিয়া আদায় করুন যে, আল্লাহ আপনাকে সামর্থবান বানিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের একটু খেদমত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। অতঃপর পরম মমতায় তাদের গ্রহণ করুন। তাদের উপর্যুপরি ভীড়ের এই “জ্বালাতনকে” একটু সহ্য করে নিন। এই একটি দিনই  কয়েক টুকরো গোশতের জন্যে তারা আপনাকে “জালাবে”। যে কয়েক টুকরো গোশত আপনার কাছে সাধারণ হলেও তাদের কাছে অসাধারণ। অমৃততুল্য। এই কয়েক টুকরো গোশত তাদের পরিবারে আনন্দের ফোয়ারা বইয়ে দিবে। শত কষ্টের মাঝেও এক চিলতে হাসির দেখা মিলবে। তাদের প্রাণ জুড়াবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই মানবিকতার দাবি।

কিন্তু আমাদের সমাজের সাধারণ চিত্র বড় বেদনাবিধুর। করুণ দৃষ্টিকটু। অসহায় মানুষগুলো যখন কয়েক টুকরো গোশতের জন্যে দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিতে থাকে তখন একশ্রেণীর কুরবানীদাতার অতি নীচু আচরণে গা রি রি করে ওঠে। ভাবতেও অবাক লাগে। কীভাবে মানুষ এতটা অমানবিক হয়। কষ্টে হৃদয়টা মোচড় দিয়ে ওঠে। আহ্! মানুষ কি করে এতটা নীচে নেমে আসতে পারে। ওদেরকে ধমকাচ্ছে,গালি দিচ্ছে। আমি এমনও দেখেছি, অসহায় মানুষদেরকে ঘাড় ধরে বের করে দিচ্ছে। অমানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত কায়েম করছে। পক্ষান্তরে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পরম মমতায় কুরবানীর এ ভালবাসার উপহার পৌঁছে দেয়ার এ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখেও চোখ শীতল করারও সুযোগ হয়েছে। শৈশবে মামার বাড়িতে ঈদের সময় এ দারুণ দৃশ্য দেখে ভীষণ পুলকিত হতাম। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ত সর্বত্র।

আসুন, আমরা মানবিকতার এ পয়গাম সর্বত্র পৌঁছে দেই। কুরবানীর গোশত বিতরণে রুঢ় আচরণ নয়, পরম মমতায় অসহায় মানুষদের কাছে ভালবাসার এ উপহার পৌঁছে দেই। অসহায় মানুষদের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাই। হাসি আনন্দে মুখরিত হোক প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি জনপদ। ঈদানন্দ ছড়িয়ে যাক সর্বত্র। ঈদ মোবারক।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর। খতীব,আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ