সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫ ।। ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১৩ জিলহজ ১৪৪৬


মাদরাসায় চামড়া কালেকশন বাদ দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| বিশেষ প্রতিনিধি ||

‘গত বছর কিছুটা চিন্তা করেছিলাম, এবার চূড়ান্ত করলাম- আগামী বছর থেকে মারকাযুদ্ দিরাসায় চামড়া কালেকশন করবো না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ! আপনি উত্তম বিকল্প করে দিন!’ মাদরাসাটির মুহতামিম মুফতী মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী এভাবেই চামড়া কালেকশন আর না করার ঘোষণা দিয়েছেন ফেসবুকে। 

শুধু মিরপুরের এই মাদরাসার পরিচালকই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন এ ধরনের পোস্ট ও কমেন্টে সয়লাব। এবারও চামড়ার দর নিয়ে কারসাজিতে ক্ষুব্ধ মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া কালেকশনে যে শ্রম, মনোযোগ ও অর্থ খরচ হয়; সে অনুযায়ী তেমন কোনো লাভ থাকে না। উল্টো প্রতি বছর চামড়া কালেকশন করে বাড়তি পেরেশানি ভোগ করতে হয়। এজন্য এই চামড়া কালেকশনের বিকল্প খোঁজার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেউ কেউ চামড়া কালেকশন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলছেন। 

আওয়ার ইসলামের পেইজে একটি নিউজের কমেন্টে আহসান হাবিব নামে একজন লিখেন- ‘চামড়া কালেকশন বন্ধ করে দিন। ছাত্র-উস্তাদদের পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দিন। প্রয়োজন হলে ছাত্রদের থেকে অনুদানের প্রথা চালু করতে পারেন। কালেকশনের এ প্রথা থেকে আলেমদের বেরিয়ে আসা উচিত।’

সাইফুল ইসলাম সোহান নামে একজন ফেসবুক কমেন্টে লিখেন- ‘আমি বলবো বিকল্প চিন্তা করুন। যারা ব্যবসায়িক মেন্টালিটির আছেন তারা কয়েকজন মিলে ট্যানারি স্থাপন করা যায় নাকি। আর এর থেকে ডিরেক্ট জুতা পর্যন্ত যাবতীয় কাজ একসাথে আঞ্জাম দেওয়া যায় নাকি এইটা নিয়ে চিন্তা করে মাঠে নামার এইটা উপযুক্ত সময়। মুসলিম কান্ট্রি হিসেবে আমরা এক সিজনে চামড়া কালেক্ট করে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে সারা বছর বাজারে জুতা সাপ্লাই দিতে পারবো। ইনভেস্টমেন্ট কেমন লাগবে। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটুকু বাজার যাচাই করা যেতে পারে।’

মুফতি কামরুল হাসান রাহমানী চামড়া কালেকশন বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লিখেন- ‘উত্তম সিদ্ধান্ত, এই ধারাবাহিকতা ব্যাপক হওয়া দরকার। আল্লাহ তায়ালা কোনো নির্দিষ্ট আসবাবের সঙ্গে তার দ্বীনকে সীমাবদ্ধ রাখেন না। আমরা যদি হিম্মত করি তাহলে আল্লাহ বিকল্প ব্যবস্থা করে দিবেন।’

মুফতী মানযূরুল হক নোমানী লিখেন- ‘আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি? এক সময় চামড়ার ভালো দাম থাকায় কওমি মাদরাসাগুলো কিছুটা উপকারের আশায় চামড়া নেওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু এখন? একদিকে চামড়ার বাজার পড়ে গেছে, অন্যদিকে দুর্নীতি, দোষারোপ, অপমান, বিশৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে চামড়া কালেকশন একটা বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই কাজের কারণে সমাজে আলেমদের ইজ্জত কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, একটু ভাবুন।’

তানভিরুল হক লিখেন- ‘হে কওম! অনেক হয়েছে, এবার ছাড়েন এই চামড়া কালেকশন।
গড়ে যদি একটি মাদরাসা ২০০ চামড়া পায় (বিশেষ করে ঢাকার বাইরে), তাহলে প্রতি চামড়া ৫০০ টাকা (অনেক জায়গায় তাও মিলছে না, গ্রামে ২৫০ টাকাও পাচ্ছে না) করে হলে এক লাখ টাকা। এর মধ্যে খরচ আছে ধরেন ২০ হাজার। শেষমেশ হাতে থাকে ৮০ হাজার। সাকুল্যে একটি মাদরাসা গড়ে চামড়া কালেকশন থেকে পাচ্ছে মাত্র ৮০ হাজার টাকা। কোথাও একটু বেশি, কোথাও এরচেয়ে কম। মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্র চার-পাঁচদিন খাটাখাটুনির পর ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে মাত্র ৮০ হাজার টাকা! দুর্মূল্যের বাজারে এই টাকা দিয়ে তো একটি মাদরাসা পাঁচ দিনও চলতে পারে না। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আপনারা সাহস করে এই প্রথা বন্ধ করে দিন। সম্মানে ও আনন্দে পরিবারের সাথে ঈদ করুন।’

মাহমুদ আরেফীন লিখেন- ‘কমিটির মাধ্যমে কুরবানির গরুর চামড়া কালেকশন করা যেতে পারে অথবা যারা সম্পূর্ণ ফ্রিতে কিছু আংশিক দিয়ে ফ্রি খায় তাদেরকে দিয়ে কুরবানি গরুর চামড়া কালেকশন করা যেতে পারে। পরীক্ষায় যাদের নাম্বারে ফ্রি খানা পায় তাদের দিয়ে কুরবানি ঈদের গরুর চামড়া কালেকশন করা যেতে পারে।’

জহিরুল ইসলাম লিখেন- ‘অধিকাংশ মুহতামিম ও কিছু উস্তাদগণ এটা তাদের ঐতিহ্য মনে করে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। আলহামদুলিল্লাহ, যারা চামড়া কালেকশন করে না তাদের প্রতিষ্ঠান চলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে তো মনে হয় না।’

এছাড়া মাহবুব হাসান লিখেন- ‘প্রতিবার কুরবানির চামড়া কালেকশন করে লস খাওয়ার পর বিভিন্ন বুদ্ধি বের করা হয়, কিন্তু কয়দিন পর আবার সব ভুলে মাদরাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদেরও চামড়া কালেকশন করতে পাঠানো হয়, যা খুবই দুঃখজনক। সাধারণ জনগণ মনে করে এরা হয়তো এতিম, আবার অনেকে খুব ছোট ভাবে দেখে এই তালেবুল ইলমদেরকে। যাই হোক, আমি মনে করি চামড়া কালেকশন বাদে অন্যভাবে এই খরচটা ব্যবস্থা করা যায় কি না ভেবে দেখা দরকার।’

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ