শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :

হেফাজতের চার রাহবার সিরাতে মুস্তাকিমের পথ প্রদর্শক ছিলেন: হেফাজত আমির

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের চার রাহবার সম্পর্কে বলেন, তাদের অনুসরণ করতে পারলেই আমরা সিরাতে মুস্তাকিমের উপর থাকব। প্রত্যেক নামাজের পরে সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার জন্য দোয়া করারও আহ্বান জানান তিনি।  কুরআনে সুলাহা-নেককারদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সুলাহাদের প্রথম স্তরই হলো সাহাবায়ে কেরাম। এখন কোনো দল যদি বলে ও মনে করে, সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি না, তারা অবশ্যই বিভ্রান্ত।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) শায়খুল হাদীস পরিষদের উদ্যোগে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে হেফাজতের চার রাহবার-আল্লামা শাহ আহমাদ শফী রহ., আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ., আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী-এর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রাম শীর্ষক জাতীয় কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শায়খুল হাদীস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক হাসান জুনাইদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক ও আল আবিদ শাকিরের যৌথ পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ কওমী মাদরাসার আলেমদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এভাবে যারা আলেমদের অপবাদ দিচ্ছে, দেশের মুসলিম সমাজকে বিভক্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ইসলামের জন্য আলাদা বাক্সের দাবীকে তিনি বিভক্তিমূলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আলেমদের পরামর্শেই জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেছেন। তাই বিএনপিকে ইসলামবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি। 

এ সময় তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের যে কোনো ষড়যন্ত্রকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আগামী দিনের মূল চালিকাশক্তি। আওয়ামীলীগের রাজনীতি এদেশে আর  চলতে দেওয়া হবে না। ভারতকে আওয়ামী লীগের প্রভু দাবী করে তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের কোনো প্রভু নেই বন্ধু আছে। যাদের প্রভু দেশের বাহিরে, সেখানেই তাদের দাফন হবে।

এসময় তিনি শাহবাগের ঘটনাকে নাস্তিক-মুরতাদদের নেতৃত্বে বিদেশী প্রযোজনায় মঞ্চস্থ এক নাটক আখ্যায়িত করে বলেন হেফাজতে ইসলাম এই নাস্তিক-মুরতাদদেরর বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে দাড়িয়েছিল। হেফাজতের রক্তস্নাত পথ ধরেই জুলাইয়ের আন্দোলন সফল হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি হেফাজতকে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপরে চলা নির্মম নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রলোভন সত্ত্বেও তিনি সরকারের সামনে মাথা নত করেননি। তাদের প্রস্তাবকে তিনি উপেক্ষা করে আপসহীনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। আমাদেরও তার অনুসরণ করতে হবে।

হেফাজতে মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে বলেন, সংগীত শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অনতিবিলম্বে জারি করতে হবে। এ সময় তিনি কিছু মানুষের আলেমদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এদের প্রতিহত করার হুঁশিয়ারী প্রদাণ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, হেফাজতের চার রাহবার কেবল ব্যক্তি নন, তাঁরা ছিলেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতের দুঃসাহসী নাবিক। আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. — ইলম, তাকওয়া ও সংগঠনের সমন্বয়ে জাতির দিশারী। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী রহ. — সাহস ও সংগ্রামের অটল প্রতীক; আপসহীন সত্যের অগ্নিশিখা। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. — প্রজ্ঞা, সংযম ও ঐক্যের শক্তিতে আলেমসমাজকে একত্রিতকারী দূরদর্শী নেতা। আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী রহ. — দাওয়াহ ও সংগ্রামে জানবাজি রাখা অটল প্রহরী। অত্যুক্তি হবে না যদি বলি, এই চার রাহবারের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের সম্মিলন, হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বের মানচিত্র অঙ্কন করেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই জাতীয় কনফারেন্স কেবল স্মৃতিচারণ নয়; বরং আগামী দিনের পথচলার দিকনির্দেশনা। আমরা তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা নেব—ইলম, খিদমত, ত্যাগ ও সংগ্রামের শিক্ষা।

জাতীয় কনফারেন্সে আরও বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সহকারী পরিচালক মাওলানা জসিমউদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনাব রাশেদ খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হুসাইন, জামিয়া কুরআনিয়া মেরাজুল উলুম, নরসিংদীর মুহতামিম মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা নাসিরুদ্দীন মুনির।

আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দ্বীনী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ আলী,     মাখজানুল উলূম মাদ্রাসা, খিলগাঁওয়ের মুহতামিম মাওলানা জহুরুল ইসলাম, জামিআতুল মানহাল উত্তরার মুহতামিম মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মুফতি সাঈদ নুর পীর সাহেব    মানিকগঞ্জ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার নাজেমে তালিমাত মুফতি আশরাফুজ্জামান, ব্যাংক কলোনী মাদরাসা সাভারের মুহতামিম মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা হেলাল উদ্দীন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.এর সাহেবজাদা মাওলানা জাবের কাসেমী, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী সাহেবজাদা মাওলানা খালেদ বিন নূর, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জামাতা মাওলানা আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আজিজ, শায়খুল হাদীস পরিষদের সহসভাপতি মাওলানা মুহসিনুল হাসান, শাপলা স্মৃতি সংসদের নির্বাহী সভাপতি মাও. আবুল হাসানাত জালালী    , শায়খুল হাদীস পরিষদের সহসভাপতি মুফতি মোহাম্মাদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, অফিস ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শরীফ হুসাইন,  কেন্দ্রীয় সদস্য মাও. এহতেশামুল হক নোমান, মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিকি, মাওলানা মিজানুর রহমান মিসবাহ, মাওলানা মুবাশ্বির আহমাদ, মাওলানা তাওকির আহমাদ, গাজীপুর জোন আহ্বায়ক মাওলানা মাসুদুর রহমান, সাভার জোন আহ্বায়ক মাওলানা ফারুক আহমেদ, সদস্য সচিব মাওলানা মাহফুজ হায়দার সদস্য সচিব, গুলশান-বাড্ডা জোন সদস্য সচিব মাওলানা মুনির হুসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হুসাইন রাজি, শায়খুল হাদীস পরিষদ যাত্রাবাড়ি জোন আহ্বায়ক মাওলানা উজায়ের আমীন, কুমিল্লা জোন যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা অলিউল্লাহ, ফরিদপুর জোন যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুল্লাহ মোস্তফা, নরসিংদী জোন সদস্য সচিব মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ, ভৈরব জোন যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা আল আমিন, মোহাম্মদপুর জোন সদস্য সচিব মাও. মিজানুর রহমান মিসবাহ প্রমুখ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ