মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৮ জিলকদ ১৪৪৬


‘ছেলের খুনিরা জামিনে মুক্ত, তবু মৃত্যুপর্যন্ত শান্তির বার্তা দিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: দেখতে দেখতে এক বছর চলে গেলো। সিবগাতুল্লাহ রশিদির মায়ের চোখের জল আর বাবার শান্তির বার্তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বছর পেরিয়ে গেলো। কিন্তু এতদিন পরেও নূর মসজিদের ইমামের মুখে ‘সেই শান্তির বার্তা’। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে নিজের ছেলেকে হারিয়েও প্রতিশোধ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আলোচিত আসানসোলের ইমামের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি ফের বললেন, ‘ছেলের খুনিরা এখন জামিনে মুক্ত, তবু মৃত্যুপর্যন্ত আমি শান্তির বার্তা দিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।’

রশিদি জানান, ‘আমার আর কী করার আছে। ইসলাম শান্তি ও মানবতার কথা বলে। আমি সেই শান্তির বার্তা দিয়েই যাবো। আমি কোনও মামলা বা এফআইআর করিনি। এদেশের প্রশাসন, সরকার ও মানুষের কাছে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। পুলিশ কেস হয়েছে। দুইজনকে গ্রেফতার করে। এখন তারা জামিনে মুক্ত।’

বাংলার শান্তির দূত বলে পরিচিত ইমাম বলছেন, ‘হিংসা ছড়ানো মানুষের কাজ নয়। মানুষ দুনিয়ায় যে কয়দিন বাঁচবে মিলেমিশে বাঁচবে। আমি জানি, দুনিয়ায় সব বিচার মেলে না। আমার ছেলের যতদিন হায়াত ছিল, বেঁচেছে। আল্লাহ চাইলে কিয়ামতের দিন বিচার হবে। ততদিন ক্ষমা, ধৈর্য্য আর শান্তির বাণী সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’

১৬ বছরের ছেলের ক্ষতবিক্ষত শরীর চিহ্নিত করেও শান্তির বাণী বুক আগলে রক্ষা করেছেন। সেদিন তার চোখের জলের সঙ্গে খানিকটা উষ্মাই হয়তো দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিতে পারতো আগুন। কিন্তু তা হয়নি। সব যন্ত্রনা বুকে চেপে শান্তির প্রচার করে দুনিয়াকে অবাক করে দিয়েছিলেন ইমাম রশিদি।

এখন এক বছর আগের সেই ভয়ের ছবি নেই। সবকিছু স্বাভাবিক। আসানসোল রেলপাড় সংলগ্ন এনআরআর রোডে সেই নূরানি মসজিদের আশপাশে স্বাভাবিক ব্যস্ততা। মসজিদের দোতলায় একটি ছোট ঘরে এখনও ইমাম মৌলানা ইমদাদুল রশিদি বসে থাকেন। আল্লাহর উপাসনা, সমাজ গঠনের কাজের মাঝেও সিবগাতুল্লাহর কথা ভুলতে পারেন না। দোয়া করেন।

ইমাম জানালেন, ‘এই ভারত আমাদের জন্মভূমি। আমাদের পূর্বপুরুষের রক্ত মিশে আছে আজাদির লড়াইয়ে। তবে এত বড় ঐতিহ্যের সেই দেশে ধর্ম, খাদ্য, পোশাক এখন রাজনীতির ইস্যু, এটা কষ্ট দেয়। যাদের দেশের আজাদির লড়াইয়ে কোনও ভূমিকা নেই তারা এখন আমাদের দেশদ্রোহী বলে! আসলে আমরা ভয় পাই। সেদিন রাতে ভয় পাইনি বলেই আসানসোলে দাঙ্গা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। সম্মিলিত প্রতিবাদ হোক ধর্মের নামে রাজনীতির বিরুদ্ধে।’

এক বছর আগে ইমাম রশিদি বলেন, ‘আমার ছেলের খুনিদের শাস্তি নিয়ে আমি বিচলিত নই। গঙ্গা-যমুনা বয়ে গেছে এই দেশে। এখানে আজাদির দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ এই দেশে বাস করে। এখানে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়। আমি সেদিন আসানসোলে যা বলেছিলাম সেটাই আমার বার্তা, শান্তিপ্রিয় সব মানুষের কাছে। আমার পুত্রের মৃতদেহের বদলে আরো অনেক মৃতদেহ, আগুন দেখতে পেলে কী আমার পুত্রশোক কমতো? না, বাড়তো। আমার পুত্রকে আমি যে চোখে দেখি অন্যের পুত্রকেও যদি সেই চোখে দেখতে পারি। তাহলে আর বিভেদ কোথায়? চোখ, দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। চাইলেও ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাহলে বিভাজন করতে পারবে না। তুমি ভুল করেছো, তাই আমিও পালটা ভুল করে শোধ তুলবো- এটা হতে পারে না। বিশ্বের কোনো ধর্ম অশান্তি, খুন, রক্ত চায় না।’

নিজের ছেলে চলে গেছে। ন্যায়বিচার মিলবে কিনা জানা নেই। তবে ইমাম বলছেন, ‘পৃথিবী শান্তিময় হোক। পৃথিবীর সব দ্বন্দ্ব মিটে যাক। একদিন আল্লাহর কাছে সবাইকে জবাব দিতে হবে। পাপ পুণ্যের সেই বিষয়টি ভেবে সবাই চললে কোনও অন্যায় থাকতো না।’

কেপি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ