রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ।। ২১ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৬ জিলকদ ১৪৪৬


নদওয়ায় নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া না করেও যেভাবে তিনি নদভী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভারতের লাখনুর বিখ্যাত দীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা থেকে যারা ফারেগ হন মূলত তারাই নদভী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশেও অনেক নদভী রয়েছেন, যারা নদওয়ায় পড়াশোনা করেছেন। তবে সদ্য পরপারের উদ্দেশে পাড়ি জমানো আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ. নদওয়ায় নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া না করেও নদভী উপাধি ধারণ করেছিলেন। তাঁকে পদ ব্যবহারের জন্য খোদ নদওয়া কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছিল। সেই গল্পটি তাঁর নিজ জবানিতেই শোনা যাক-

দুই মাসের জন্য নদওয়ায় যাওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব রহ. একবার আমাকে নদওয়ায় গিয়ে কিছুদিন কাটিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন। তিনি আলি মিয়া নদভী সাহেবকে একটা চিঠিও লিখলেন। হজরত তিন মাসের জন্য যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। ১৯৮১ সালে নদওয়া থেকে আন্তর্জাতিক একটি সেমিনারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ আসে। সেই সেমিনারে আমি অংশ নিই এবং প্রবন্ধও পাঠ করি। সেমিনারের পর দুই মাস ইলমি ইস্তেফাদার জন্য নদওয়ায় অবস্থানের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে হজরত ভীষণ খুশি হলেন। হজরত রাবে সাহেবকে নির্দেশ দিলেন আমার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিতে। নদওয়ায় হজরতের সান্নিধ্যে দুই মাস ছিলাম। পুরো সময়টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। হজরতসহ নদওয়ার সেরা মনীষীদের কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করেছি।

সেই সময় নদওয়ায় তিনি কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন। সে সম্পর্কে আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ. বলেন, আমি যখন নদওয়াতুল উলামায় দুই মাসের জন্য যাই, আমার শায়খ হজরত আলী মিয়া নদভী রহ. হজরত রাবে হাসানী নদভী রহ.কে নির্দেশ দিলেন আমার কর্মসূচি ঠিক করতে। তিনি আমার রুটিন ঠিক করে আমাকে জানালেনÑ আপনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় আদব ও ইনশার ওপর দুই একটি ক্লাস নিতে থাকুন। আর কয়েকটি সাহিত্য দরসে বসুন এবং কুতুবখানায় বসে গবেষণা করুন। ছাত্রদের মধ্যে কিছু ছিল বিহারের এবং কিছু লক্ষ্মৌর স্থানীয়। সেখানকার ছাত্রদের উর্দু-আরবি লেখা সংশোধন করা সহজ কাজ ছিল না। তবে উর্দু-আরবি ভাষার সঙ্গে আমার যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল এবং অনেক বছর ধরে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় ছাত্রদের লেখালেখি সংশোধন করার যে অভিজ্ঞতা আমার ছিল, তার ওপর ভর করেই কোনোভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। আল্লাহর বড় মেহেরবানি ছিল। নইলে এক বাঙালি শিক্ষকের পক্ষে নদওয়াতুল উলামার মতো ইলম ও আদবের কেন্দ্রভূমিতে গিয়ে পাঠদান কোনো মামুলি কাজ ছিল না।

নামের সঙ্গে নদভী যুক্ত হওয়ার গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, দুই মাস নদওয়ায় কাটিয়ে ফিরে আসার কয়েক দিন আগে এক মজলিসে হজরত মাওলানা রাবে হাসানী নদভী, হজরত মাওলানা সাঈদ আজমী ও হজরত মাওলানা ওয়াজেহ রশিদ নদভী রাহিমাহুমুল্লাহ বসা ছিলেন। আমাকে লক্ষ্য করে মাওলানা রাবে সাহেব বললেন- ‘মাওলানা যওক সাহেব! বলুন তো, আপনার উর্দু এতো চমৎকার ও বিশুদ্ধ কীভাবে হলো?’ আমি নিরুত্তর বসে রইলাম। কেননা আমার কাছে এর কোনো জবাব ছিল না। মাওলানা সাঈদ আজমী সাহেব বললেন- মাওলানা! আপনি নদভী লেখা শুরু করে দেন।’তার কথাকে সমর্থন করে মাওলানা রাবে সাহেব বললেন- হ্যাঁ, আপনি এই সফরে নদওয়া থেকে অনেক উপকৃত হয়েছেন, আপনি নদভী লেখেন, এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। ফিরে আসার পর মাওলানা সাঈদ আজমী সাহেব চিঠিতে আমার নামের সাথে নিজেই নদভী লিখলেন। পরবর্তী সময়ে মাওলানা আলী মিয়া নদভী রহ. এক সফরে আমাকে বললেন- আমরা আপনাকে সম্মানসূচক নদভী করে দিলাম। আপনি নদভী লিখবেন। কেউ সনদ জিজ্ঞাসা করলে আমার নাম বলে দেবেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করতে বলুন। তবে পটিয়ায় থাকা অবস্থায় আমি নামের সঙ্গে নদভী লিখতে সঙ্কোচবোধ করতাম। পটিয়া থেকে চলে আসার পর নামের সঙ্গে নদভী যুক্ত করি।

[সূত্র: ত্রৈমাসিক লেখকপত্রে জহির উদ্দিন বাবরের নেওয়া সাক্ষাৎকার এবং আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ.-এর আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে]

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ