বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬


রানা প্লাজায় আহতদের ৫৭ ভাগের শারীরিক অবস্থার অবনতি, বেড়েছে ট্রমা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহতরা এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন৷ তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়াগুলো এখন আরো স্পষ্ট হচ্ছে৷ তাদের অনেকেরই কাজ করার মত সক্ষমতা নেই৷ কেউ কেউ ভিক্ষা করতেও বাধ্য হচ্ছেন৷

আহতদের মধ্যে এক হাজার ৪০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ৷ তাদের মধ্যে ২০০ শ্রমিককে গত ৯ বছর ধরে নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা৷ এবারো ওই ২০০ জনের জনের ওপর জরিপ করেছে তারা৷

জরিপে দেখা গেছে আহত শ্রমিকদের ৫৬.৫ ভাগের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে৷ গত বছর এই সংখ্যাটি ছিলো শতকরা ১৪ ভাগ৷ আহতরা এখনো কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ড, মাথা ও হাত-পায়ের নানা সমস্যায় ভুগছেন৷

২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের সাভারে রানা প্লাজা বিধ্বস্ত হলে নিহত হয় অন্তত ১,১০০ পোশাক শ্রমিক৷ এ ঘটনার পর পশ্চিমা যেসব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়, তারা পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়৷ সম্প্রতি বেশ কিছু নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছেন৷

গত এক বছরে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত বেড়ে ৪৮.৫ ভাগ হয়েছে৷ এক বছর আগে ছিলো ১২.৫ ভাগ৷ জরিপে আহতদের অর্থনৈতিক চিত্রও ফুটে উঠেছে৷ তাদের ৫৩ ভাগ এখনো কোনো কাজ পাননি বা কাজ করতে পারছেন না৷ যে ৪৩ ভাগ কাজ পেয়েছেন তারা যে সবাই পোশাক কারখানায় কাজ পেয়েছেন তা নয়৷ অনেকেই পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন৷ যারা কাজ পাননি তাদের ৬৭ ভাগ শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেন না৷ ১০ শতাংশ মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন৷

জরিপ বলছে, আহতদের মধ্যে যারা কাজ পেয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ১৪.৫ শতাংশ পোশাক কারখানায় ফিরে যেতে পেরেছেন৷ আরও ৮ শতাংশ টেইলারিং এর সাথে জড়িত আছেন৷ বাকিরা এখন পেশা বদলে গৃহকর্মী, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, বিক্রেতা এবং গাড়ি চালানোর মতো পেশায় যুক্ত হয়েছেন৷ কেউ কেউ ভিক্ষাও করছেন৷

করোনা মহামারিতে তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে৷ অনেকের আয় আগের চেয়ে কমে গেছে৷ আহতদের ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় এখন মাসে পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে৷

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, ‘‘আহত শ্রমিকদের দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার আওতায় রাখা হয়নি৷ ফলে তাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ শ্রমিকরা বলেছেন, আহত হওয়ার পর এখন তাদের শরীরে আরো নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ মানসিক সমস্যা হচ্ছে৷ যেগুলো আগে ছিলো না৷ দীর্ঘ মেয়াদে যে প্রতিক্রিয়া হবে তা তাদের চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে তখন রাখা হয়নি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেকে কাজ পেয়েছে কিন্তু তারা সবাই তো আর পোশাক কারখানায় পায়নি৷ তাদের আয় কমে গেছে৷ খাদ্য সংকটে পড়েছে৷ খাবার ঠিক মতো না পাওয়ায় শারীরিক সমস্যা আরো বেড়ে গেছে৷''

রানা প্লাজা নিয়ে কাজ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্ট্যাডিজ-এর অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন৷

তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজার ঘটনার পর কাঠামোগত উন্নয়নে জোর দেয়া হয়৷ আইএলওর প্রতিবেদনের পর তাদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়, সেটা ভালো৷ কিন্তু আহতদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি৷ ৯ বছরে আহতদের বয়স বেড়েছে, শারীরিক জটিলতাও বেড়েছে৷ তাদের অনেকেরই কাজ নেই৷ কাজ করতে পারেন না৷ তার প্রভাবও পড়ছে৷ তারা তখনই ট্রমাটাইজ ছিলেন৷ পরিস্থিতির কারনে ট্রমা আরো বেড়েছে৷''

তার কথা, ‘‘সরকারের কাছে এখন আর হয়তো কোনো জরিপও নেই যে আহতরা কোথায় কেমন আছে৷ এটার একটা জরিপ করে তাদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার আওতায় নেয়া দরকার৷ তাদের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল৷ এর ব্যয় তাদের নিজেদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়৷''

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধ্বসে এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত হন দুই হাজার ৫০০ শ্রমিক৷

সূত্র: ডিডব্লিউ

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ