বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটের সংলাপ: ৭ দফা ঐকমত্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: তিন দিনে ভারতীয় ১৬ ড্রোন ভূপাতিত জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে মসজিদ-মাদরাসায় হামলা ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিফলন: খেলাফত মজলিস ভারতীয় মুসলিম নেতারা হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের আস্থা অর্জন করতে পারবেন কি? ‘আল্লামা সুলতান যওক নদভীর স্মৃতি নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করবে’ পাক-ভারত যুদ্ধ : ঈমানের লড়াই না ভূখণ্ডের দ্বন্দ্ব? ‘নারী কমিশন ইস্যুতে বিতর্ক জিইয়ে রাখা সরকারের উচিত হচ্ছে না’ ভারত-পাকিস্তান সংঘাত – শান্তির শেষ সুযোগ কি ইসলামাবাদের হাতে? পাকিস্তানে নয়, মোদি নিজের ওপরই হামলাটা করলেন

পাকিস্তানে নয়, মোদি নিজের ওপরই হামলাটা করলেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিদ মীর

৬ ও ৭ মে, ২০২৫-এর মধ্যরাতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের ওপর নয়, বরং নিজের ওপরই আক্রমণ করেছেন। আক্রমণের পরপরই ভারত সরকার এক বিবৃতিতে দাবি করে যে, পাকিস্তান ও মুক্ত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হামলা চালানো হয়েছে। ২০১৯ সালে মোদির সরকার পাকিস্তানের বালাকোটে একটি পাহাড়ি এলাকায় হামলা চালিয়ে দাবি করেছিল যে, সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। তবে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর আমি হামলার স্থান পরিদর্শন করে দেখেছিলাম সেখানে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। ২০১৯ সালের মতোই ২০২৫ সালে ভারত একই মিথ্যা দাবি করেছে। এবারও পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আট নিরীহ পাকিস্তানিকে শহীদ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুরাও ছিল এবং ৩৫ জন আহতের মধ্যে মহিলাও অন্তর্ভুক্ত।

ভারত ২২ এপ্রিল পেহলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, কিন্তু কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ৬ ও ৭ মে, মধ্যরাতে, ভারত পাকিস্তানের নিরীহ শিশু ও মহিলাদের হত্যা করে নিজের বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ রেখে গেছে। পাকিস্তান এই হামলার তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী চারটি যুদ্ধবিমান আকাশযুদ্ধে ভূপাতিত করেছে এবং দুটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে উৎক্ষেপিত HQ-9 ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

৭ মে সকালে দিনের আলো ফুটতেই ভারতীয় মিডিয়া তাদের বিমান বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রচার করতে শুরু করে। এখন নরেন্দ্র মোদিকে তার কর্মকাণ্ডের ফল ভোগ করতে হচ্ছে। পাকিস্তান শুধু ভারতের যুদ্ধবিমানই লক্ষ্য করেনি, বরং নিয়ন্ত্রণরেখার আশেপাশের বেশ কিছু ভারতীয় চেকপোস্ট ও দুর্গও ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া নরেন্দ্র মোদির জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি মনে করেছিলেন, কিছু বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বিজয়ের উল্লাস করবেন, কিন্তু ৭ মে দিনের আলোয় ভারতীয় মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছিল যে, এক রাতেই তাদের বিমান বাহিনীর এত ক্ষতি কীভাবে হলো? পাকিস্তান বিমান বাহিনী ২০১৯ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল এবং ২০২৫ সালে আবারও ভারতীয় বিমান বাহিনীর ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। স্পষ্টতই, ভারতীয় বিমান বাহিনীর মর্যাদা আবারও মাটিতে মিশে গেছে এবং এটি শুধু ভারতীয় বিমান বাহিনীর নয়, বরং নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ক্ষতি। এখন তিনি এই ক্ষতির প্রতিকার করতে চেষ্টা করবেন।

পাকিস্তান প্রথম আক্রমণ করেনি; এটি ছিল শুধু একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ। যদি ভারত আবারও পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ চালায়, তবে পাকিস্তান আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। অনেক আন্তর্জাতিক নেতা পাকিস্তান ও ভারতকে যুদ্ধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, তবে পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করেনি। পানি সংকট সৃষ্টি করে, সন্ত্রাসী হামলার মিথ্যা অভিযোগ এনে এবং বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ভারতই আগ্রাসন শুরু করেছে। এটি হতে পারে না যে, ভারত যখন খুশি হামলা করবে এবং যখন খুশি যুদ্ধবিরতি করবে।

পাকিস্তানকে উচিত, যুদ্ধবিরতি কেবল তখনই মেনে নেওয়া, যখন ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করবে। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা ছিল প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের সূচনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘকেও এই বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয় যে, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পর ভারত পাকিস্তানের নদীগুলোর পানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। যদি ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি পুনরায় কার্যকর না করে তবে পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিতে পারে। শিমলা চুক্তি ১৯৪৮ সালের যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণরেখায় রূপান্তরিত করেছিল। আন্তর্জাতিক আইনের অনুযায়ী, যখন দুটি দেশ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে সম্মত হয়, তখন তার রক্ষার দায়িত্ব উভয় দেশের। কিন্তু যদি এই নিয়ন্ত্রণরেখা বাতিল হয়ে যায়, তবে কাশ্মীরিরা আর পারাপার করতে বাধাপ্রাপ্ত হবে না।

কাশ্মীরিরা কখনোই এই নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে নেয়নি; অতীতে জেকেএলএফসহ অনেক সংগঠন এই নিয়ন্ত্রণরেখা ভাঙার ঘোষণা দিয়েছে এবং পাকিস্তানকে শক্তি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণরেখা রক্ষা করতে হয়েছে। যদি শিমলা চুক্তি স্থগিত হয়ে যায় তবে নিয়ন্ত্রণরেখাও স্থগিত হয়ে যাবে। পাকিস্তানের কাছে শিমলা চুক্তি স্থগিত করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে; ১৯৮৪ সালে ভারত সিয়াচিন হিমবাহের চূড়ায় দখল করে শিমলা চুক্তির লঙ্ঘন করেছিল; ৫ আগস্ট ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে শিমলা চুক্তির লঙ্ঘন করেছিল; সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত পাকিস্তানের দিকে আসা পানি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে পাকিস্তানে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় পানি আগ্রাসন শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং মুক্ত কাশ্মীরের জনগণের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে; তাই এই পানি আগ্রাসন প্রতিহত করতে শিমলা চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা কোনো আগ্রাসন নয় বরং একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হবে।

আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সরকার ব্রিটিশদের সহায়তায় শ্রীনগরে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছিল, যার ফলে যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধ থামাতে পাকিস্তান নয়, ভারত জাতিসংঘে আবেদন করেছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করে এবং গণভোটকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হিসেবে চিহ্নিত করে। ভারত সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ হয়েছিল এবং এখন আবারও একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকি বিদ্যমান। এই যুদ্ধে ভারত আক্রমণকারী, আর পাকিস্তান আত্মরক্ষায় নিয়োজিত। যদি পাকিস্তান তার কৌশল সঠিকভাবে প্রয়োগ করে এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখে, তবে এইবার কাশ্মীরিদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা অর্জন করা সম্ভব এবং ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধও নেওয়া সম্ভব।

[হামিদ মীর পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক। উর্দু দৈনিক জং থেকে লেখাটি অনুবাদ করেছেন: সাইমুম রিদা]

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ