ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় ১৯ বছর পর দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ মুসলিমকে খালাস দিয়ে মুম্বাই হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে সেই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও ভারতীয় মুসলিমদের অন্যতম অভিভাবক মাওলানা আরশাদ মাদানী।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেছেন, মুম্বাই হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের উচিত এই রায়ের স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) ভিত্তিতে নোটিশ নেওয়া। এই রায়ের মাধ্যমে আবারও সেই সত্যেরই প্রমাণ মিলল, যা আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি—মুসলিম যুবকদের সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদের জীবন ধ্বংস করা একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।
মাওলানা মাদানী বলেন, এভাবে শুধু নির্দোষ যুবকদের জেলে পাঠানো হচ্ছে না, বরং গোটা একটি জাতিকে অপমান ও কলঙ্কিত করাও হচ্ছে। আমরা বহু বছর ধরে এই দাবিও জানিয়ে আসছি যে, তদন্তকারী সংস্থা ও পুলিশের জবাবদিহিতা নির্ধারণ করা উচিত। যতদিন তা না হবে, ন্যায়বিচারের পূর্ণাঙ্গতা আসবে না।
২০০৬ সালে মুম্বাই ট্রেন বিস্ফোরণে ১৮৯ জনের মৃত্যু ও ৮০০ জনের বেশি আহত হওয়ার ১৯ বছর পর মুম্বাই হাইকোর্ট রোববার এ মামলায় দণ্ডিত ১২ আসামিকে খালাস দিয়েছে। ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত এই ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে, যার মধ্যে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের বিচারপতি অনিল কিলোর এবং বিচারপতি শ্যাম চন্দকের বেঞ্চ ট্রায়াল কোর্টের রায় বাতিল করে জানিয়েছে, ‘প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’ আদালত তাদের রায়ে বলেছে, ‘এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে আসামিরা এই অপরাধ করেছে। তাই তাদের দণ্ড বাতিল করা হলো।’
আদালত আরও জানিয়েছে, অন্য কোনো মামলায় প্রয়োজন না হলে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, প্রসিকিউশনের ব্যর্থতায় আসামিদের সন্দেহের সুবিধা (বেনিফিট অব ডাউট) দেওয়া হয়েছে। আদালত সাক্ষীদের বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বিস্ফোরণের ১০০ দিন পর কোনো ব্যক্তি সন্দেহভাজন কাউকে চিনতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে আদালত।
আদালত আরও জানায়, তদন্তে যে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মানচিত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তার সঙ্গে বিস্ফোরণের কোনো সংযোগ প্রমাণিত হয়নি। এমনকি কী ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি।
২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের সাতটি লোকাল ট্রেনে ১১ মিনিটের ব্যবধানে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে। দাহ্য পদার্থসহ চাপকলের মধ্যে রাখা বোমাগুলি ফার্স্ট-ক্লাস কামরায় রাখা হয়েছিল। প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে সন্ধ্যা ৬টা ২৪ মিনিটে, যখন অফিসফেরত যাত্রীদের ভিড়। শেষ বিস্ফোরণ হয় ৬টা ৩৫ মিনিটে। বিস্ফোরণ ঘটে মাতুঙ্গা রোড, মাহিম জাংশন, বান্দ্রা, খার রোড, জোগেশ্বরী, ভাইয়ন্দর ও বোরিভালি স্টেশনের কাছাকাছি।
এনএইচ/