মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


ঠিকাদারের ‘গাফিলতি’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে হতাহতের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, গাফলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল (সোমবার) কাজ করার কথা ছিল না, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল।

কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কিছু বিষয় সেখানে উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তদন্তের মূল বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন পেয়েছি, আরও দুই দিন লাগবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে। চারটি কারণ তারা জানিয়েছে।

কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট টিম লিডার মিস্টার টিক বলেছেন, ১৫ অগাস্টে জাতীয় শোক দিবস থাকায় গার্ডার হস্তান্তরের কোনো সেগমেন্ট ছিল না। কনসালটেন্টের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল কাজ বন্ধ ছিল। কনসালটেন্টের মাধ্যমে প্রত্যেকটা গার্ডার সেগমেন্টের কাজ পরিচালনা করা হয়। একটি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট হস্তান্তর করার পরে দ্বিতীয়টির সময় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

সচিব বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলাই কারণ; বন্ধের দিন কাজ করার কথা নয়। এটা কিন্তু কোনো ওয়ার্কপ্ল্যান ছিল না।

দ্বিতীয় কারণ তুলে ধরে সড়ক সচিব বলেন, কাজ শুরু করলেও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টকে কাজের বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। কাজ করতে চাইলে, তার উচিত ছিল ট্রাফিককে জানানো।

তৃতীয় কারণ জানিয়ে নুরী বলেন, দুর্ঘটনার সময় সড়কটির এক অংশ উঁচু এবং এক অংশ নিচু ছিল, ফলে ক্রেইনটি যখন কার্যক্রম চালাইতেছিল তখন এর একটি চেইন রাস্তার উঁচু অংশে এবং অপর চেইনটি রাস্তার নিচু অংশে ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে ক্রেইনটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এটাও আপনারা সবাই দেখেছেন এক পাশে কাত হয়েছিল ক্রেইনটি।

চার নম্বারটি হচ্ছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য মতে-বিকালের দিকে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই গাড়িটি (দুর্ঘটনায় পড়া গাড়ি) খুব দ্রুত নীচে চলে আসে, ক্রেইন অপারেটর হঠাৎ ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এটা প্রাথমিক অভজার্ভেশন।

এ বিষয়ে ‘সঠিক তথ্য’ পেতে চালককে প্রয়োজন জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, আমরা ড্রাইভারকে খোঁজার চেষ্টা করছি, যেখানে পাওয়া যায় গ্রেপ্তার করার জন্য বলেছি, কারণ তার কাছে সঠিক ঘটনাটি জানা যাবে।

তিনি জানান, ওই গার্ডারের ওজন ছিল ৭০ টন, আর ক্রেইনটি ৮০ টন বহনে সক্ষম। ওই ক্রেইন দিয়ে আগেও গার্ডার সরানোর কাজ হয়েছে। তাহলে কেন দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে চালককে দরকার।

কারা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সে বিষয়েও তদন্ত কমিটি ধারণা দিয়েছে জানিয়ে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এই দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনকে (সিজিজিসি)। এই ধরনের কাজ করলে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি আগের দিন একটি প্ল্যান দেয়, যেহেতেু সে আগের দিন কনসালটেন্ট টিমকে জানায়নি, কোনো প্ল্যান পায়নি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেই কাজটি করেছে। কোনো সাব ডিলারও নিয়োগ করেনি। নিজে চায়নিজ লোকদের নিয়ে ড্রাইভার দিয়ে কাজটি করেছে।

সে ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আমরা পেয়েছি। কারণ তাদের উচিৎ ছিল, প্রজেক্টের পিডি, পিএম, কনসালটেন্টকে জানানো। তারা কাউকে জানায়নি। তারপরেও উচিত ছিল যেহেতু কাজটা করবেই- তাহলে কাউকে না বললেও ট্রাফিককে বলা, সেটাও করেনি; এটা ঠিকাদারের ব্যর্থতা। সর্বোপরি ক্রেইন অপারেটর, তারও ব্যর্থতা আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কালকে যারা ছিল, সবাই চায়নিজ কোম্পানির লোক, শুধু ড্রাইভার ছিল বাঙালি।

ঠিকাদার কোম্পানির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ প্রশ্নের উত্তরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, ঠিকাদার কোম্পানিকে জরিমানা করা যায়, টার্মিনেট করা যায়, ঠিকাদার যেন আর কোনো কাজ করতে না পারে, সেজন্য ব্ল্যাক লিস্টেড করা যায়-এগুলো ব্যবস্থা নেয়ার উপায়। চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হবে।

মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না-এ প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, কেউ দায় এড়াতে পারে না। এক দিনের মধ্যে একটা তদন্ত হয় না। অবশ্যই সুযোগ আছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। এই ক্রেইন দিয়ে কিন্তু গার্ডার উপরে উঠাচ্ছিল না। এটা দিয়ে স্থানান্তর করতেছিল। আরেকজন ড্রাইভার আনার পরে ওই ক্রেন দিয়েই গার্ডার সরানো হয়েছে। রেগুলার একটি মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডের মোড়ে বিপণিবিতান আড়ংয়ের সামনে একটি গার্ডার ক্রেন দিয়ে ট্রেলারে তোলার সময় চলন্ত একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যায়। গাড়িটিতে শিশুসহ ৭ জন ছিলেন, এদের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন। বেঁচে যাওয়া দুজন হলেন নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। হৃদয়-রিয়া মনির বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন সবাই।


সম্পর্কিত খবর