শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচিত সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেকেরই ভাগ্য বদল হয়েছে। এমনই একজন কক্সবাজারের পেকুয়ার শাহাদাত হোসেন। আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি করা এই যুবকের মাসিক উপার্জন এখন ৩৫-৪০ হাজার টাকা। তার ভাগ্য বদলের সেই গল্প বলেছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বিশিষ্ট দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহ।
আস-সুন্নাহ চেয়ারম্যানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া সেই গল্প হুবহু তুলে ধরা হলো-
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার এক সাধারণ পরিবারের সন্তান শাহাদাত হোসাইন। ২০১৮ সালে চকরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেও জীবন সহজ হয়নি। চাকরির অভাবে হতাশা যখন গ্রাস করতে শুরু করল, সে সময় তাকে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হলো।
প্রথমে বান্দরবানের একটি হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানে কাজ নিলেন। বেতন মাত্র আট হাজার টাকা! এই সামান্য আয় দিয়ে নিজের প্রয়োজনই মেটে না, পরিবারের খরচ কীভাবে মেটাবেন!
কিন্তু শাহাদাত হার মানলেন না। বরং শেখার আগ্রহ নিয়ে রয়ে গেলেন সেখানেই। ধৈর্য, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি হয়ে উঠলেন এক দক্ষ কারিগর। বাঁশ আর কাঠের ছোঁয়ায় তৈরি করতে শিখলেন নানান ধরনের শিল্পপণ্য—মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, জগ, কেটলি, ট্রে, কলমদানি, ফুলদানি, মোবাইল স্ট্যান্ড, কত কিছু!
এক বছর পর বেতন বাড়ল, হলো বারো হাজার। কিন্তু ততদিনে সংসারের খরচও বেড়েছে। অভাবের কঠিন বাস্তবতায় জীবন হয়ে উঠল আরো সংকটময়।
স্বল্প বেতনে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই একদিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরিটা ছেড়ে দেবেন। নতুন কিছু শুরু করবেন। কিন্তু কীভাবে? হাতে পুঁজি নেই, পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
নিরুপায় হয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ নিলেন। নির্মাণ শ্রমিকের মতো কড়া রোদে পুড়ে দিন পার করলেও, মনে বুনে চলছিলেন স্বপ্নের জাল।
এ সময় স্বপ্ন পূরণে শাহাদাতের পাশে এসে দাঁড়ায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। দক্ষতা ভিত্তিক উদ্যোক্তা তৈরি প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে তাকে দেওয়া হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে হ্যান্ডিক্রাফটের ছোট্ট একটি কারখানা স্থাপন করেন। নিজের তৈরি করা শিল্পপণ্য পাইকারি বাজারে সরবরাহ করতে থাকেন কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দেশের নানা প্রান্তে।
এভাবে শাহাদাত শুধু নিজেই বদলাননি, নিজের কারখানায় আরও দুজন বেকারের কর্মসংস্থান করেছেন।
তবে তার স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। আগামী ১ বছরের মধ্যে পেকুয়া বাজারে আরেকটি শো-রুম খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে তার তৈরি পণ্য বিক্রি হবে খুচরাতেও। অনলাইনে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও আছে তার।
শাহাদাত হোসাইন প্রমাণ করেছেন, হালাল কোন কাজই ছোট নয়। তিনি অনেকের অনুপ্রেরণা। একদিন তার শো-রুমের ঝলমলে আলোয় আলোকিত হবে আরও অনেক স্বপ্ন, তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। ইনশাআল্লাহ।
এনএইচ/