বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ।। ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৪ জিলকদ ১৪৪৬


কীভাবে ভালো বক্তা হয়ে উঠবেন 


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
     
কোনো কোনো বক্তার বক্তব্য এতটাই হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠে মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে। কারো বক্তব্য আবার মাথার উপর দিয়ে যায়! রাজনীতির ময়দানে, ওয়াজের মাঠে, সেমিনার কিংবা সিম্পোজিয়ামে ভালো একজন বক্তা হয়ে উঠতে কে না চায়? ভালো বক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে ভালো কিছু গুণ। 

বক্তব্যের বিষয়বস্তু সাজিয়ে নিন

বক্তব্যের মধ্যে বেশ কিছু ধাপ থাকে। একটি বক্তব্য একই বিষয়ে হতে পারে কিংবা হতে পারে অনেক বিষয়ের সমষ্টিও। যাই হোক, আপনি প্রথমে আপনার বক্তব্যের একটি কাঠামো তৈরি করুন। বক্তব্যটা  লিখে ফেলুন কিংবা নিজের মনে সাজিয়ে ফেলুন কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান। 

অনুশীলনের বিকল্প নেই 

বক্তব্যের বিষয়বস্তু সাজিয়ে নেয়ার পর এবার বারবার অনুশীলন করুন। মনে রাখবেন, আপনি যা বলতে চান সেটা শ্রোতার কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হলে বারবার অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। অনুশীলন একটি সাদামাটা বক্তব্যকেও অসাধারণ রুপ দিতে পারে। 

শুরুটা যেন আকর্ষণীয় হয়

যার শেষ ভালো তার সব ভালো--এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু বক্তব্যের ক্ষেত্রে শুরুটা ভালো করতে হয়। শুরুতে যদি শ্রোতার মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেন তাহলে খেল্লাফতে। তাই শুরুটা সাদামাটাভাবে না করে একটু ভিন্নভাবে করুন্

শ্রোতা বা দর্শকের মনোভাব বুঝতে হবে

 শ্রোতা বা দর্শকের সারিতে কারা থাকবেন তাদের ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ধারণা নিন। বুঝুন তাদের মনোভাব এবং ঠিক করুন কেমন হবে আপনার বক্তব্যের ধরণ। দর্শক বা শ্রোতার বয়স, পেশা মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে আপনার বক্তব্যকে সাজান। যাদের জন্য যেটা প্রযোজন সেটা দেয়ার চেষ্ট করুন। 

কন্ঠস্বরে আনুন বৈচিত্র্য 

কন্ঠস্বর এবং উপস্থাপনে বৈচিত্র্য না আনতে পারলে একটি উচ্চমার্গের বক্তব্যও একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে। একটি বক্তব্যকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য যেখানে সুর নরম করার দরকার সেখানে নরম করুন। যেখানো কঠোর করা দরকার সেখানে কঠোরতা নিয়ে আসুন। আবেগী কথা আবেগ সহকারেই বলুন। 

ধীরস্থিরতা বক্তব্যকে করবে পরিপাটি 

অধিকাংশ মানুষের মধ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় তুমুল উত্তেজনা কাজ করে। আর সেই উত্তেজনাকে দমাতে না পেরে বক্তা খুব দ্রুত হড়বড় করে বলতে গিয়ে বক্তব্য অগোছালো করে ফেলেন। তাই নিজেকে ধীরস্থির রাখুন। বক্তব্য হয়ে উঠবে পরিপাটি ও পরিশীলিত। 

রাগ, ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ করুন 

বক্ত্রব্যের সময় রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণার উদ্রেক হতেই পারে। তাই বলে সব উগড়ে দেবেন না। রাগ, ক্ষোভ এবং ঘৃণাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন সুচারুভাবে। মনে রাখবেন, আপনার বক্তব্য যেন কোনো ব্যক্তি, বা সমাজকে আঘাত না করে। অন্যের আবেগ অনুভূতিকে যথাযথ সম্মান করুন। 


উপস্থাপন করুন সঠিক তথ্য-উপাত্ত

প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত আপনার বক্তব্যে এনে দেবে গভীরতা, করে তুলবে গভীর গুরুত্ববহ! তবে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত হতে হবে সঠিক। ভুল তথ্য উপাত্ত শ্রোতার মনে সৃষ্টি করবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। দেবে ভুল মেসেজ। তাই তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন।


প্রভাবিত করে বক্তার ব্যক্তিত্ব 

বক্তার ব্যক্তিত্বও শ্রোতাদের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বক্তার বেশভূষা. তার বাচন ভঙ্গি, আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই শুধু কথাবার্তায় স্মার্ট না হয়ে সাজিয়ে তুলুন নিজের ভেতর-বাহির। অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা একজন বক্তার অনন্য বেশিষ্ট্য।

 থাকা চাই বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান
 
যে বিষয়ের উপর বক্তব্য দেবেন সেই বিষয়ে বক্তার গভীর জ্ঞান থাকা আবশ্যক। প্রয়োজনে করতে হবে ব্যাপক পড়াশোনা, করতে হবে গবেষণাও। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা সবাই শুধু বলতে চাই, কেউ শুনতে চাই না। ভালো বক্তা একজন  ভালো শ্রোতাও বটে। 

ধর্মীয় বক্তার গুণাবলী 

মানুষকে দ্বীন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে ওয়াজের কোনো বিকল্প নেই। এটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী একটি পন্থা। এজন্য সর্বপ্রথম আপনার নিজের মধ্যে দ্বীন সম্পর্কে থাকতে হবে স্বচ্ছ ধারণা। কুরআন এবং হাদিসের অর্থ এবং ব্যাখ্যা সম্পর্কেও থাকতে হবে যথেষ্ট জ্ঞান। থাকতে হবে কথা ও কাজের সাথে মিল। সেই সাথে ওয়াজের বিষয়বস্তু হতে হবে যুগোপযোগী। ইসলামি আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় হাসি-ঠাট্টা বিরত থাকা উচিত।

এসএকে/

 

 

 


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ