মুজিব হাসান
‘সাহিত্যের ক্লাস’ বইটির কাছে আমি দারুণ ঋণী। কারণ এই বইটি আমার কিশোর বয়সে—যখন মনে সাহিত্যের ফুলকলি ফুটি ফুটি করছে—দেখিয়েছে সাহিত্যের পথ। আমার মতো আরও অনেক কিশোর-তরুণের সাহিত্যের পাথেয় এই বইটি। সে হিসেবে এই বইয়ের লেখক এক অর্থে আমাদের সাহিত্যের শিক্ষক।
তিনি মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীন। হাফিজাহুল্লাহ। এই সাহিত্যের শিক্ষকের সাথে ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সফর হয়েছে কিশোরগঞ্জ, আবু হুরাইরা মাদরাসায়, এক সাহিত্য মজলিসের মেহমান হিসেবে। এই প্রথম আমার হুজুরের এত কাছে যাওয়া, তাকে নিবিড়ভাবে দেখা, তার হাতে তুলে দেওয়া নিজের তৃণসম সৃজনগুলো; সেইসাথে স্পর্ধা (!) দেখিয়ে তাদের পাশে বসা।
গাড়িতে হুজুর আমার তিনটি বই : কারবালার প্রকৃত ইতিহাস (অনুবাদ), মাওলানা আকরম খাঁ : মুসলিম সাংবাদিকতার জনক (জীবনী সাহিত্য), পাঁচ পাপড়ির কাঁটা (গদ্য) দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়েছেন। তারপর সাহিত্য, ঘরানা, রাজনীতি, সমাজ ও আত্মস্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। পুরোটা সময় আমি আর উমারা হাবীব শুনেছি সব; জিজ্ঞাসা করেছি এটা-সেটা।
মাদরাসায় পৌঁছার পর দিলকাশ মেহমানদারি হলো। মাওলানা রহমতুল্লাহ সাহেব এ ব্যাপারে সবসময়ই উদার। এরপর সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হলো সাহিত্য মজলিস। হুজুরের কথা বলার শুরুতে সঞ্চালক মুহসিন ভাই আমাকে কিছু বলতে বললেন। কিন্তু সেখানে আমার সাহিত্যের শিক্ষক উপস্থিত, তিনিই যেখানের প্রধান আলোচক, সেখানে কী বলব আমি! তাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতামূলক কয়েকটি কথা বললাম। এরপর হুজুর শুরু করলেন আলোচনা।
হুজুরের আলোচনায় শব্দ ও সাহিত্য নিয়ে চমৎকার তথ্যকথা ছিল। ছিল হাসি-মজাকের মিশেলে দারুণসব শব্দ-কল্প-গল্প। আলোচনার মাঝখানে গদ্য সাহিত্য পড়া নিয়ে হুজুর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : পুরানা শক্তিমান গদ্যকারদের মধ্যে কার গদ্য (যারা ওপরের জামাতের ছাত্র, তাদের জন্য) পড়া যায়? আমি ভাবতে ভাবতেই তিনি উত্তর দিলেন : বুদ্ধদেবকে পড়ো তোমরা। তার গদ্যে গতিময়তা সবসময় প্রাসঙ্গিক। (এটির আমার স্মরণ-বুঝে বললাম। হুজুর হয়তো এমনই বলেছিলেন।)
যাক, হুজুরের সাথে এই সফর দারুণ স্মৃতিমেদুর হয়ে রইল। আলোচনার শেষ দিকে এলেন সাইফ সিরাজ ভাই। তিনিও বসলেন। তখনই ফ্রেমবন্দি হয়ে গেলাম এই মহারথীদের সাথে। আমি তো অকিঞ্চন। তারাদের পাশে বসেছিলাম বলে নিজেকে চকমকে লাগছিল।
লেখক: তরুণ কথাশিল্পী
এমএইচ/