মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৮ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদ-এর কার্যক্রম বন্ধে স্মারকলিপি প্রদান  রাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের আংশিক প্যানেল ঘোষণা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ চাপে থাকায় মালয়েশিয়ার ‘উদ্বেগ’ প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা মালয়েশিয়ানদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা পোপকে গাজার শিশুদের রক্ষার আহ্বান জানালেন মার্কিন গায়িকা ম্যাডোনা বিএনপির চেয়ে দ্বিগুণ আয়, ৫ গুণ বেশি ব্যয় জামায়াতের প্রথম বার ঢাকায় আসছেন সৌদি যুবরাজ শাপলা হত্যায় ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ১২ নভেম্বর আলোর প্রভাত ও আল হিদায়া ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত 

রক্তদানে উৎসাহিত করে ইসলাম


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| হুমায়ুন আইয়ুব ||

মানবতার সেবায় বরাবরই উৎসাহিত করে ইসলাম। মানুষের সেবায় রবকে পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। অসহায়, গরিব-দুখীর সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে। রোগে কাতর মানুষের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। নেকের কাজ। অসুস্থ রোগীকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করাও গুরুত্বপূর্ণ সেবা।

উত্তর-আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান রক্ত দেওয়া-নেওয়ার সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। ইসলামও রক্তদানের কাজকে বিশেষ বিবেচনায় উৎসাহিত করছে। মানুষ ও মানবতার কল্যাণ হিসেবে দেখছে। রক্তদানের কাজকে আল্লাহ তায়ার সন্তুষ্টির কারণ বলেই মনে করছে। কবি আবদুল কাদিরের সেই বিখ্যাত কবিতা-হাশরের দিন বলিবেন খোদা হে আদম সন্তান/তুমি মোরে সেবা কর নাই যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান/ মানুষ বলিবে তুমি প্রভু করতার/আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/বলিবেন খোদা-দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘোরে/তারি শুশ্রুষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।

কবির দরাজ কণ্ঠের উচ্চারণ, মানুষের সেবা করলে আল্লাহকে পাওয়া যায়। কবি আবদুল কাদিরের সেই কবিতা মুসলিম শরিফের একটি হাদিসের ভাব তরজমা। হজরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রুষা করনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার সেবা শুশ্রুষা করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি, তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে আমাকে তার কাছেই  পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। মানুষ বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে আহার করাতে পারি? তুমি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার  চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি  চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। মানুষ বলবে, হে আমার পরয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে পান করাব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক।  আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেয়ে যেতে। (মুসলিম শরিফ : ২৫৬৯)

রক্তের বাঁধন পবিত্র বন্ধন। শ্রদ্ধা সম্মান আর মায়ার বাঁধন। রোগে পড়ে, প্রসূতি নারীর জন্য কিংবা দুর্ঘটনায় পড়ে সংকটময় মুহূর্তে একজনকে রক্ত দিলে কৃতজ্ঞতা আর মমতায় মনটা ভরে ওঠে। শ্রদ্ধা ভক্তিতে মাথা নুইয়ে দেয় রক্ত দাতার প্রতি। সামান্য এক ব্যাগ রক্তে জীবন বাঁচে একজনের। এক ভাইয়ের। এক বোনের।  সেই রক্তদান যদি হয় শুধুই আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তবেই তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর বরকতময় কাজ। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো,  সে যেন সব মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা : ৩২)

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো জীবন বাঁচাতে রক্ত দেওয়া নিশ্চয় সওয়াবের কাজ। কল্যাণের কাজ। তবে এই রক্তের বিনিময়ে কোনো টাকা পয়সা নেওয়া যাবে না। উপহার নেওয়া যাবে না। 
আমরা খুবই পরিচিত হাদিসের একটি গল্পের সঙ্গে। রাস্তার পাশে পিপাসায় কাতর একটি কুকুর। কুকুরকে পানি খাইয়ে জান্নাতে গেছেন একাজন নারী। ব্যভিচারী। আমার রব কতটা দয়ালু। কতটা মহান। কতটা সে দয়াপরায়ন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কুকুরকে পানি পান করিয়ে এক ব্যভিচারী নারী ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন। (বুখারি: ৩৩২১)


পা থেকে চামড়ার মোজা খোলে, কুয়া থেকে পানি তুলে কুকুরকে পানি পান করালেন একজন নারী। আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার দিলেন বিশাল জান্নাত। সোজা জান্নাত। গায়ের রক্ত দিয়ে, মানুষ বাঁচালে এর পুরস্কার কী হতে পারে, তা নিজেরাই চিন্তা করুন। আল্লাহ তায়ালা বড়, আল্লাহ তায়ালার খাজানাও অনেক বড়। আল্লাহ তায়ালার পুরস্কারও বড়। 

জমিনে হেঁটে চলা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। সন্তুষ্ট হন। অনুগ্রহকারীর প্রতি দয়ালু হন। নবীজি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করো। অনুগ্রহ করো। আল্লাহ তায়ালাও তোমাদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করবেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিজি)

সন্দেহ নেই অসুস্থতা, বিপদে বা সংকটে পড়লেই কেবল রক্ত দেওয়া বিষয়টি সামনে আসে। আর বিপদে এগিয়ে আসা মানবতার পরিচয় বিপদে মুহূর্তে পাশে দঁড়ালে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের মাঠেও আমাকে-আপনাকে বিপদমুক্ত করবেন। 

নবীজি বলেন, যে অন্যের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন। (আবু দাউদ: ৪৮৯৩)

অসুখ-বিসুখে রাতভর হাসপাতালের বেডে ঘোঙানো আমার মা, প্রসবের  ব্যথা বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া আমার বোন, পথেঘাটে এক্সিডেন্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেঁচে থাকা আমার ভাইয়ের জন্য যখনই রক্তের প্রয়োজন হয়, রক্ত নিয়ে হাজির হওয়া সেই মানুষটি আদতে মানুষ হলেও, শ্রদ্ধা-ভক্তি আর সম্মানে তাকে ফেরেশেতা মনে হয়। মনে হয় আকাশ থেকে নেমে আসা রহমতরে ফেরেশতা। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়বো। অসুখে-বিসুখে কান্না-বিলাপে পাশে দাঁড়াবো। সজলা নয়নে রক্তের জন্য অপেক্ষমাণের পাশে দাঁড়াবে। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ