শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী দলগুলোর নেতারা। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার প্রক্রিয়া, জাতীয় নির্বাচন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে এই বৈঠকে সরব আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। ধৈর্য ধারণ করতে হবে আমাদের। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে সামনে এগোতে হবে। ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আল্লাহ থাকেন।"
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “অভ্যুত্থানের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কেন ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার হলো না?” একইসঙ্গে তিনি দাবি জানান, “আগামী জুন মাসের মধ্যে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”
নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, “কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো কুরআন-বিরোধী। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো প্রস্তাব আমরা মানব না। ইসলামই একমাত্র নারীর প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছে।”
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা এসেছিলাম। আমরা বৈঠকে খোলামেলা কথা বলেছি। বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে গত ৩-৪ দিনে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা, জনমানুষের মাঝে যে উৎকণ্ঠা বিরাজমান, সেই প্রেক্ষাপটে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি—যে অবস্থাই হোক না কেন, তিনি যেন মাঝপথে হাল না ছাড়েন।”
তিনি আরও জানান, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আস্বস্ত করেছেন যে, আমরা সকলে যদি তাঁকে সহযোগিতা করি, তাহলে চলমান সংস্কারকে একটি পর্যায়ে নিয়ে দেশ ও জাতিকে একটি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে তিনি তাঁর দায়িত্ব শেষ করবেন। এবং একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান। সেই নির্বাচনের জন্য তিনি বলিষ্ঠ ভাষায় বলেছেন, ২০২৬ সালের জুনের পর এক ঘণ্টাও তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না।”
মামুনুল হক আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছি—
১. চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি। এভাবে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাওয়া উচিত নয়। সংস্কার কতটুকু হয়েছে ও হবে—সেটা জাতির সামনে স্পষ্ট করা উচিত।
২. বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যে গণহত্যা হয়েছে, তার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের—বিশেষ করে প্রধান আসামিদের—শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বলা যায়, সংস্কারে অগ্রগতি হয়েছে।
৩. করিডর ও বন্দর ইস্যুতে দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যকলাপ সংঘটিত হবে না—এ কথা তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে জানিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বলেছি, করিডরসহ সকল আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যেন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা থেকে জাতির মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেন ঘন ঘন বসা হয়।”
“আমাদের দলীয় একটি বিষয় ছিল—হেফাজতের নেতাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলো যেন প্রত্যাহার করা হয়। সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করছি, খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।”
নারী সংস্কার কমিশন বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আস্বস্ত করেছেন, কুরআন-বিরোধী কোনো আইন তিনি বাস্তবায়ন করবেন না।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আমরা নির্বাচনের বিষয়ে পরিষ্কার মতামত জানতে চেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর জুন মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করবেন।”
এসএকে/