|| আব্দুল্লাহ আনাস ||
মানুষের অন্তরে চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। তবে সব ইচ্ছাই পূরণ হয় না, আর সব চাওয়াই কল্যাণকরও নয়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হয় এবং কীভাবে জীবন চলার পথে তাকওয়া ও আমলের মাধ্যমে মনের চাওয়া পূরণের পথ প্রশস্ত করতে হয়।
নিচে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে মনের ইচ্ছা পূরণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. পরিষ্কার নিয়ত ও আন্তরিক দোয়া
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
“নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভর করে, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তা-ই থাকবে যা সে নিয়ত করেছে।”
সহিহ বুখারী: ১, মুসলিম: ১৯০৭
তাই ইচ্ছার পূর্ণতার জন্য সর্বপ্রথম দরকার একটি বিশুদ্ধ নিয়ত এবং আল্লাহর কাছে খালিস মনে দোয়া করা।
২. নিয়মিত সালাত ও তাকওয়া অবলম্বন
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ইসলামের স্তম্ভ এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।”
সূরা আত-তালাক: ২-৩
তাকওয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন নিজের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েই সফলতা লাভ করে।
৩. সদকাহ ও মানুষের উপকারে আসা
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
“সদকাহ রিযিক বৃদ্ধি করে এবং বিপদ দূর করে।”
তিরমিজি: ৬৬২
ইচ্ছা পূরণে সদকা অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে গোপনে সদকা দেয়া বা দুঃস্থ কাউকে সহযোগিতা করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উত্তম মাধ্যম।
৪. ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা (তাওয়াক্কুল)
মনে রাখতে হবে, ইচ্ছা পূরণে সময় লাগতে পারে। আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন, তার রিযিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন; আর তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মনির্বাহী।”
সূরা আলে ইমরান: ১৭৩
ধৈর্য রাখা ও তাওয়াক্কুল একজন মুমিনের আত্মিক শক্তি।
৫. ইস্তিখারা করা ও ভালো পরামর্শ নেয়া
নবী করিম (সা.) প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘ইস্তিখারা’ করতেন। এটি একটি বিশেষ দোয়া, যা আমাদের শেখানো হয়েছে:
“হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞানের মাধ্যমে আমি কল্যাণ চাই, তোমার শক্তির মাধ্যমে সাহায্য চাই, আর তোমার কাছ থেকে তোমার মহান অনুগ্রহ কামনা করি…”
সহিহ বুখারী: ১১৬৬
এছাড়া অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করাও সুন্নাহ।
উপসংহার
ইসলাম কোনো জাদুমন্ত্র নয়, বরং এটি একটি বাস্তবধর্ম। মনের চাওয়া পূর্ণ হবে—এই আশায় শুধু বসে না থেকে প্রয়োজন যথাযথ চেষ্টা, ঈমানদার আমল এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ধৈর্য। সবশেষে, আল্লাহর সিদ্ধান্তই সর্বোত্তম। তিনি আমাদের চাওয়া দেরিতে দেন, কখনো ভালো দিয়ে প্রতিস্থাপন করেন, আর কখনো অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেন।
আমরা যেন আমাদের ইচ্ছাগুলো হালাল পথে পূরণের চেষ্টা করি এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখি। আল্লাহ আমাদের সকল হালাল চাওয়া পূরণ করুন। আমিন।