বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল একটি ইবাদত নয়; বরং এটি এমন এক মহান উপায়, যার মাধ্যমে একজন বান্দা তার প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। কুরআন ও হাদীসে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন, তারা পরকালে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য অর্জন করবেন।

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের আদেশ দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে “হে চাদরে আবৃত, রাতের কিছু অংশ বাদে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করো।” (সুরা মুজাম্মিল: আয়াত ১-২)

হজরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,  “ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ, অর্থাৎ রাতের নামাজ।” (সহিহ মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

কিয়ামুল লাইল, অর্থাৎ রাত জেগে নামাজ আদায়, হলো মুমিনের মর্যাদার সিঁড়ি, জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এবং সফলতার চাবিকাঠি। এটি আল্লাহর একান্ত প্রিয় হওয়ার একটি প্রধান উপায়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ ত্যাগ করেননি; ছুটে গেলে তা কাজা করতেন। তিনি নিজে তা নিয়মিত আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উৎসাহিত করতেন।

একদিন জিবরীল আলাইহিস সালাম নবীজীকে একটি অসাধারণ বার্তা দেন— “হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা হলো কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) এবং তার সম্মান হলো মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়া।” (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস: ৭৯২১; আল-মুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস: ৪২৭৮)

এক রাতে হজরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) দেখলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছেন যে, তাঁর মোবারক পা ফুলে গেছে। বিস্মিত হয়ে তিনি বললেন, “আপনি তো এমন একজন, যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে, তবুও এত কষ্ট করছেন!”

নবীজী উত্তরে বললেন, أَفَلاَ أُحِبّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا؟
অর্থাৎ, তবে কি আমি আল্লাহর একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে ভালোবাসব না? (সহিহ বুখারী: ৪৮৩৭; সহিহ মুসলিম: ২৮২০)

হজরত আবু উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সৎলোকদের অভ্যাস ছিল, এটি তোমাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায়, পাপ মোচনের মাধ্যম এবং গোনাহ থেকে বিরত রাখে।” (জামে তিরমিযি: হাদীস ৩৫৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম: হাদীস ১১৫৬)

এছাড়াও তাহাজ্জুদের মর্যাদা ফরজ নামাজের পরেই। হজরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবীজী ইরশাদ করেন, “রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা হলো মুহাররম মাসের রোযা, আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।” (সহিহ মুসলিম: হাদীস ২৭২৫)

তাহাজ্জুদে শারীরিক উপকারিতাও রয়েছে। রাতের শেষ ভাগে তাহাজজ্জুদ নামাজ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় ও উদ্বেগ হ্রাস করে।ধ্যান ও ইবাদতের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও চাপ হ্রাস পায়। এছাড়াও রাতের শেষভাগে মস্তিষ্ক সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। এই সময়ের ইবাদত মনোযোগ ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা জাগ্রত করে।

তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি অন্তরকে আলোকিত করে, জীবনকে করে পরিশুদ্ধ এবং আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাহাজ্জুদ ত্যাগ করতেন না।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ