সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার খুনিদের ভয়ে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ  ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামার সক্রিয় ভূমিকা ছিল’ ‘বসিলা আন্দোলন জমানোর পিছনে আমাদের মাদ্রাসার বড় ভূমিকা ছিল’ ১১ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২১, আহত ৫ হাজারের বেশি: টিআইবি

ইয়ামানি খতিব বললেন- ‘আব্দুল মালিক হাফিজাহুল্লাহ বিশ্বমানের মুহাদ্দিস’


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| উসাইদ মুহাম্মদ ||

গত শুক্রবার জুমা পড়লাম এক ইয়ামানি ইমামের পেছনে। খুতবাটি ছিল বিশ্বমানের। তাঁর বাচনভঙ্গি, শব্দের ঝংকার, আবেগের তীব্রতা—সব মিলিয়ে এক কথায় মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মতো।

খুতবার এক পর্যায়ে তিনি গাজ্জার মজলুম জনগণের অবর্ণনীয় কষ্ট ফুটিয়ে তুলছিলেন। কথা বলতে বলতে আবেগে ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। হঠাৎই কেঁদে ফেললেন তিনি। সেই মুহূর্তে পুরো মসজিদে এমন এক পরিবেশ তৈরি হলো, যেন নিরবতার এক ফরাশ বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে - শুধু শোনা যাচ্ছে ইমামের কাঁপা কণ্ঠ।

নামাজ শুরু হলো। ইয়ামানিদের কণ্ঠ এমনিতেই মোহময়, আর এই ইমামের তেলাওয়াতে ছিল এক বিশেষ ধরনের গাম্ভীর্য ও অন্তর্নিহিত তেজ।

নামাজ শেষে আমি অনেক চেষ্টা করে তাঁর সঙ্গে মুসাফাহা করলাম।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন দেশ থেকে এসেছো?’

বললাম, ‘বাংলাদেশ।’

‘ওহ্! আব্দুল মালিক হাফিজাহুল্লাহ আছেন না? চিনো তাকে? তুমি আলেম?’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘জ্বি জ্বি, আর সবাই উনাকে চেনে। উনি তো এখন আমাদের জাতীয় খতিব।’

‘আল্লাহু আকবার! খুব ভালো সংবাদ। তাঁর হাদিসের দরসে বসার সুযোগ হয়েছে কখনও? 

‘জ্বি না শায়েখ।’

‘সুযোগ পেলে একদিন বসবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বিশ্বমানের মুহাদ্দিস। আমি যদি কখনো

বাংলাদেশে যাই, ইনশাআল্লাহ তাঁর সঙ্গে দেখা করব। আর তুমি দেশে গেলে আমার সালাম দিও।’

এরপর ইমাম সাহেব চলে গেলেন। আশেপাশের অন্যান্য মুসল্লিরাও তাঁর সঙ্গে মুসাফাহা করলেন।

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখের সামনে দিয়ে তাঁর চলে যাওয়া দেখছিলাম। কিছুটা স্তব্ধ, কিছুটা বিমুগ্ধ।

মসজিদ থেকে বের হতে হতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল…আব্দুল মালিক হাফিযাহুল্লাহকে আমি কত কাছ থেকে দেখেছি!

যেদিন বাইতুর রাসূল (সা.) মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিলাম, সেদিন হুজুর কীভাবে কীভাবে যেন অফিসে ছিলেন। এমনিতে হজরত প্রায়ই আসতেন। মাদরাসার হুজুররা তখন আমাকে ভর্তির ইন্টারভিউয়ের জন্য কুরআন থেকে পড়তে বলেছিলেন। আমি আব্দুল মালিক হুজুরের সামনেই পড়ছিলাম। তখন চিনতাম না তাঁকে। দেখে আহামরি কিছু মনে হয়নি। তেলাওয়াত শেষে হুজুর বলেছিলেন:

‘কুরআন শুধু গলা দিয়ে পড়ার জিনিস না। গলা থেকে একটু নিচে হাত দাও।’
আমি বুকের বাম পাশে হাত রাখলাম।
তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ, এই জায়গা দিয়ে পড়তে হয় কুরআনকে। লাহান সুন্দর, কিন্তু অন্তর দিয়ে পড়া উচিত।’

আজ ভাবি, কী গভীর কথা ছিল সেটা।

আল্লাহ তাআলা আব্দুল মালিক হাফিযাহুল্লাহকে হিফাযত করুন,
তাঁর ইলমকে কবুল করুন, এবং আমাদেরকে তাঁর যথাযথ সম্মান ও কদর করার তাওফিক দিন।
তিনি বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য নেয়ামত।

আজ যারা বলে—‘বায়তুল মোকাররমের জন্য আরও যোগ্য কেউ দরকার’-
তারা হয়তো হুজুরের এলেম, তারাক্কি, দরস, দরসগাহ, প্রভাব - এসবের ঘ্রাণও পায়নি।
আরবের বড় বড় ইলমি জাহাজ যারা—তারা আব্দুল মালিক হুজুরকে চিনে, সম্মান করে, এবং কদর করে। আর আমরা বাংলাদেশে বসে, তাঁকে চিনে উঠতে পারলাম না।

লেখক: বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফি শিল্পী,

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ