|| যুবায়ের আহমাদ ||
বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেবার পর দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে কিছুটা হলেও বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এমনিতেই দাখিল পাস করে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ মারাত্মক ভুল করে কলেজে চলে যায়। কাম্য শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে অধ্যক্ষরা চিন্তায় থাকেন। তার মধ্যেই এবার অনেক দাখিল মাদরাসাকে আলিমে উন্নীত করা হয়েছে। তারা কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করবে, কিছু শিক্ষার্থী কলেজে চলে যাচ্ছে। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ধরার প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়েছে।
আমার মনে হচ্ছে, সামনের কয়েক বছর শিক্ষার্থী সংকট আরও তীব্র হবে। কারণ, একদিকে উপরের স্তরগুলোতে এ সংকট দূর করণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিচের স্তরগুলোতে শিক্ষার্থী আসা বাড়াতে হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে অনুদানভুক্ত যেসব মাদরাসা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের জন্য শর্ত শিথিল করে হলেও এমপিওভুক্ত করতে হবে। কারণ, এ মাদরাসাগুলোর শিক্ষকরা যুগ যুগ ধরে কোনো রকমের সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ধরে রেখেছেন। এবার হয়তো শিক্ষার্থী কম, ২ বছর আগে তো ছিল। সামগ্রিক বিবেচনায় বৈষম্যের শিকার পুরাতন মাদরাসারগুলোর জন্য শর্ত শিথিল করে সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করা দরকার।
পাশাপাশি অনিদানবিহীন মাদরাসা অনেক। বিগত সরকারগুলো যদি আটকে না রাখত, সুযোগ-সুবিধা দিত তাহলে এ প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেক ভালো থাকতো। মানবিক বিবেচনায় তাদের জন্যও শর্ত শিথিল করে সেগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্ত করণের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি নগর এলাকায় নতুন মাদরাসা স্থাপনের জন্য জায়গার শর্ত আরেকটু শিথিল করা দরকার। কারণ, গ্রামে ৩০ শতাংশ জায়গার দাম কেনো কোনো এলাকায় ৩-৫ লাখ টাকা। শহরে এক শতাংশ জায়গার দাম ২০-৫০ লাখ টাকা। শহর হয় জনবহুল। এখানে প্রতিষ্ঠানের দরকার বেশি। এ বিবেচনায় শহরের জন্য জায়গার শর্ত আরও শিথিল করা দরকার।
পাশাপাশি সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসাসহ এমপিওভুক্ত হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত জাতীয়করণ করে শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ইবতেদায়ি ক্বারীসহ বেশ কয়েকটি পদে শিক্ষক সংকট প্রকট। এ সংকট নিরসনে জেলা পর্যায়ে মুজাব্বিদ বিভাগ সক্রিয় করতে হবে। এমপিও নীতিমালায় বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আলাদা জনবল থাকলেও মুজাব্বিদ বিভাগের জন্য আলাদা জনবল নেই। এরও সমাধান প্রয়োজন।
ইবতেদায়ি স্তরের পদগুলোতে যে বেতন তাতে এনটিআরসিএর নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে এখানে শিক্ষকতা করতে যোগ্য প্রার্থীরা আগ্রহী হবে না। প্রাইমারি স্কুলেও নিবন্ধন লাগে না। এজন্য ইবতেদায়ি স্তরের জন্য প্রাইমারির মতো আলাদা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করে দ্রুত শিক্ষক সংকট দূর করা প্রয়োজন। বৃত্তি চালু হচ্ছে, এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু উপবৃত্তি, মিডডে মিল বা ফিডিংসহ প্রাইমারিতে যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলোর সব ইবতেদায়িতে চালু করতে হবে। মাদরাসায় বাণিজ্য বিভাগ চালুর আগে এগুলো জরুরি বেশি। না হলে শিক্ষার্থী সংকট কমবে না।
লেখক: কলামিস্ট, খতিব ও শিক্ষক
এসএকে/