আওয়ার ইসলাম: আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান ও বেফাক সভাপতি, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির, যাত্রাবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব, মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, ওয়াজ টাকার জন্য নয় বরং নিজের ইসলাহ ও নফসের ইসলাম আর দাবলিগের জন্য করা উচিত।
আজ রোববার রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদরাসার উলামা-মাশায়েখ ও খোলাফাতের খাস বয়ানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি নসিহত করতে গিয়ে বলেন, আল্লামা কাশ্মীরী রহ. ১৫ দিন এক জায়গায় তাফসির করতেন। মুসল্লিরা এর খরচ বহন করতেন। একবার তিনি অসুস্থ হয়ে কাশ্মীর চলে গেলেন। পরে দেওবন্দের মজলিসে শূরার বৈঠক হয়ে ১৫ দিনের বেতনসহ তার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু তিনি সে বেতন নিতে অস্বীকার করলেন। পরে মাদরাসা থেকে বলা হলো ১৫ দিন আপনাকে মুবাল্লিগ হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু তিনি তারপরও নিতে অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন আমাকে অল্প একটু দীনের কাজ বিনিময় ছাড়া করতে দাও?
আজ আমরা ৫০০ টাকা কম হলে মাদরাসা ছেড়ে অন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছি। তাই আমাদের এসলাহ জরুরি। আজ আকাবিরদের নসিহত অবশ্যই পড়তে হবে। আমার ওয়াজ যেনো আমি শুধু না করি। আর আপনি আমার জন্য ওয়াজ না শোনা হয়। আমার নবি দায়িত্ব পেয়ে কান্না করেছেন। আর আমরা দায়িত্বের জন্য মারামারি করি। আমাদের ফিকিরকে শক্তিশালী করতে হবে। তাই আমাদের দীনের কাজ করতে হবে ঐখলাসের সঙ্গে। ওয়াজ টাকার জন্য নয় বরং নিজের ইসলাহ ও নফসের ইসলাম আর দাবলিগের জন্য করা।
আজকাল আমাদেরকে দাওয়াতের কাজে বেশি বেশি সময় দিতে হবে হিকমতের সাথে দাওয়াত দিতে হবে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের কাছে আলোচনা করতে হবে। বড় বড় মাসলা-মাসায়েল তো আমরা আলোচনা করি কিন্তু ছোট ছোট বিষয়গুলো আলোচনা করি না।
আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। গুনাহ ছেড়ে দিয়ে ভালো কাজ যখন করা হবে তখন গুনার সুযোগ হবে না। সমাজ থেকে গোনাহ কমানো আমাদের দায়িত্ব। আলেমকে আল্লাহ তালা দুইটি প্রশ্ন করবেন। আর জাহেলকে একটি প্রশ্ন করবেন। জাহেল কে বলবে তুমি এমন করছ। আর আলেম কে বলবে তুমি আমল করতে এবং মানুষকে আমলের প্রতি ডেকেছো। শুধু তুমি নিজে বাঁচলেই হবে না মানুষকে উম্মতকে জান্নাতের দিকে ডাকতে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হবে। তাহলেই তোমারা সফলতা। তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে কতজন মানুষকে জীবনে কালিমা শিক্ষা দিয়েছ।
আলেমরা যদি ঠিক থাকে সব ফাসাদ শেষ হয়ে যাবে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম ঠিক ছিলেন, সব বেদায়াত, ফাসাদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে সব চেয়ে বড় খারাপ কাজ হচ্ছে দেশে দীনের কোনো কাজ নেই। এ কাজ বাড়ালে দেশে শান্তি আসবে। তাবলিগ বন্ধ তাযকিয়া বন্ধ, সব বন্ধ। এগুলো আমাদের উপর আজাবের মত।
টেলিফোনে আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে সালাম দেই। ঘরে প্রবেশ করার মতো করে অপেক্ষা করা দরকার। ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম দিলে যদি উত্তর না আসে। আমরা অপেক্ষা করি আবার সালাম দেই অপেক্ষা করি আবার সালাম দেই উত্তর আসলে তারপর আমরা ঘরে প্রবেশ করি। ঠিক মোবাইলের ক্ষেত্রে এরকম। যতক্ষণ পর্যন্ত সালামের উত্তর না দিবা ততক্ষণ পর্যন্ত কথা বলা শুরু করা যাবে না। সালামের উত্তর দিলেই কথা বলা শুরু করা দরকার। বিষয় গুলো যত্নসহকারে খেয়াল করা দরকার।
নামাজের সময় গুলোতে টেলিফোন মোবাইল বন্ধ রাখা উচিত। আধা ঘন্টা সময়ের জন্য। আজকে সবার হাতে হাতে মোবাইল এটার যে কি পরিমাণ প্রভাব পড়ছে এটা আপনারা সবাই জানেন। এই বিষয়গুলো যদি নিষেধ করা হয় এই পর্যায়ে এসে অনেকে নারাজ হয়ে যায়। মোবাইল ইন্টারনেট ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে চায়না মানুষ। আমরা ওয়াজ শুনি কথা শুনি আলোচনা শুনে কিন্তু নিজের জীবনে সেগুলো ফিট করতে পারি না। মানতে পারি না। মৃত্যুর আগে যদি তওবা কবুল না হয় তাহলে সব ভালো কাজ সোয়াবের কাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার সব সময় উপলব্ধি হয়, এই যে আমরা পেরেশানির মধ্যে আছি নানান সমস্যার মধ্যে আছি এগুলো কিন্তু আমাদের কাজের কারনে হয়। ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্র সব জায়গায় আমাদের উপর যে মুসিবত আসে এগুলি আমাদের কাজের কারণেই হয় কাজের কারণেই আসে। কোরআন ঐটাই বলছে। আমাদের আমল আমাদের কাজ এগুলোর সবকিছু আল্লাহর কবুল করনে ওয়ালা। তিনি যদি কবুল না করেন তাহলে এগুলো কোন কাজে আসবে না।
-এটি