বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ফ্রান্সের সিনেটে মিয়ানমারের ঐক্য সরকারকে স্বীকৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্য সরকারকে’ স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট।

গত মঙ্গলবার সিনেটে এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবে জাতীয় ঐক্য সরকারকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি ও সহযোগিতা দিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফ্রান্সের সিনেটে মিয়ানমারের ঐক্য সরকারকে স্বীকৃতিএদিকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আব্দুল্লাহ গতকাল বুধবার তাঁর দেশের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বলেছেন, মিয়ানমার সংকট সমাধানে জান্তা যদি আসিয়ানকে সহযোগিতা না করে তবে মালয়েশিয়া জাতীয় ঐক্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করবে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নিপীড়নসহ অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে।

ফ্রান্সের সিনেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিও ও তথ্য থেকে জানা গেছে, সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসংক্রান্ত প্রস্তাবে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, গণগ্রেপ্তারসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে। এরপর ১৬ এপ্রিল অং সান সু চিকে স্টেট কাউন্সেলর করে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেন। এটি নির্বাসিত সরকারের আদলে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ও বিদেশে কাজ করছে। এই প্রথম কোনো দেশের পার্লামেন্ট তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল।

এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতিনিধিকে মিয়ানমার সহযোগিতা না করায় মালয়েশিয়াও ক্ষুব্ধ হয়েছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আব্দুল্লাহ গতকাল তাঁর দেশের পার্লামেন্টকে বলেছেন, আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের গত সোমবারের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে মিয়ানমারের জান্তা তার দেশের পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করতে আসিয়ানকে সহযোগিতা করছে না। এ ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে মিয়ানমারের ‘জাতীয় ঐক্য সরকারের’ সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় একটি বিল উঠেছে। ‘বার্মা ইউনিফায়েড থ্রু রিগোরাস মিলিটারি অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট অব টোয়েন্টি টোয়েন্টিওয়ান (সংক্ষেপে বার্মা অ্যাক্ট)’ নামে ওই বিল গত মঙ্গলবার উত্থাপন করেন প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ ডাব্লিউ মিকস, পররাষ্ট্রবিষয়ক এশিয়া-প্যাসিফিক উপকমিটির র্যাংকিং সদস্য স্টিভ শ্যাবট ও সিনেটর বেঞ্জামিন এল কার্ডিন। তাঁরা বলেছেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান এবং চলমান সংকটের পটভূমিতে ওই দেশটির সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহিতে আনতে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বিলটি তাঁরা উত্থাপন করেছেন।

এই বিলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের পাশাপাশি তাদের সহযোগী ও আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদেরও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, বিলটিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গও এসেছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ‘জেনোসাইড’ কি না, তা বিবেচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও আশপাশের দেশগুলোতে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে এমন নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোকে সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে ওই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বিলটি আইনে পরিণত হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের ওপর আরো চাপ ও সুযোগ সৃষ্টি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত খনিজসম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থ বিষয়ক দপ্তর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেন না এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেউ তাঁদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করতে পারেন না। রোহিঙ্গা নিপীড়নসহ মিয়ানমারে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী মিশনও মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ ডাব্লিউ মিকস গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অবৈধ সামরিক অভ্যুত্থানের পর আট মাস পেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক চাপ সত্ত্বেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সহিংসতা বন্ধ, অন্যায়ভাবে আটক করা ব্যক্তিদের মুক্তি এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা শুরু করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

কংগ্রেসম্যান জর্জ ডাব্লিউ মিকস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে হবে এবং মিয়ানমারের জনগণকে রক্ষায় ও সহযোগিতায় আরো কাজ করতে হবে।’

কংগ্রেসম্যান শ্যাবট বলেন, মিয়ানমারের জনগণ যথেষ্ট সামরিক শাসন পেয়েছে। মিয়ানমারে চলমান ঘৃণ্য অপরাধগুলোর জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাতে এই আইন সহায়ক হবে। সিনেটর কার্ডিন বলেছেন, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নির্বিকার থাকলে চলবে না।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উভয় কক্ষই মিয়ানমারে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী সামরিক নেতা ও অন্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কাজ করছে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ