বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

৪০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করল বারবাডোস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্রিটিশ রাজের সঙ্গে সবধরনের বশ্যতার সম্পর্ক ছিন্ন করে একটি স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ বারবাডোস। ইংরেজ জাহাজ আসার প্রায় ৪০০ বছর পর ইংরেজ শাসন থেকে নিজেদের পূর্ণ স্বাধীন ঘোষণা করল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশটি। যদিও আজ থেকে ৫৫ বছর আগেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বারবাডোস, তথাপি এতদিন ব্রিটিশ রানীকেই নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মেনে আসছিল। এর আগে তাদের শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী ছিল।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রাতে ব্রিটেনের সঙ্গে সবরকম ঔপনিবেশিক শাসনের সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটি নতুন রিপাবলিক হিসেবে ঘোষিত হয়। রাজধানী ব্রিজটাউনে এ সময় ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়।

শহরের জনগণ শেম্বারলেই ব্রিজে জড়ো হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে এখন থেকে আর তারা তাদের রানি হিসেবে স্বীকার করবে না। তারা তাদের নিজেদের একজন মানুষকেই দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

ঔপনিবেশিকতার অবসান উদযাপনে সম্পূর্ণ বার্বাডিয়ান নৃত্য ও সঙ্গীতের জমকালো প্রদর্শনের পর বার্বাডোস প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের নেতা প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি বার্বাডিয়ান গায়িকা রিহানাকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করেন।

এ সময় ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই রয়াল স্ট্যান্ডার্ড পতাকা নামিয়ে নতুন বারবাডোসের সূচনা ঘোষণা করা হয়।

এ ঘটনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্যান্য যেসব দেশে এখনো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্রাজ্ঞী হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন, সেসব দেশও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন বারবাডোসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সান্ড্রা মেসনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেসন বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমাদের ঔপনিবেশিক অতীতকে পুরোপুরি ছেড়ে আসার। বারবাডিয়ানরা একজন বারবাডিয়ানকেই তাদের রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দেখতে চায়’।

তবে দেশটি কমনওয়েলথ-এর সদস্য হিসেবে থাকবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং জ্যামাইকাসহ পৃথিবীর ১৫টি দেশে ব্রিটেনের রানিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

প্রিন্স চার্লস বলেন, ‘এই প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি একটি নতুন সূচনা। আমাদের অতীতের অন্ধকারতম দিনগুলো এবং দাসত্বের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা, যা আমাদের ইতিহাসকে চিরকাল কলঙ্কিত করে, তা থেকে এই দ্বীপের লোকেরা অসাধারণ দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের পথ তৈরি করে নিয়েছে’।

ব্রিটেনের রানিও তার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

স্বাধীনতা ঘোষণা করার ৫৫ বছর পর বার্বাডোস নিজেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে সমস্ত ঔপনিবেশিক বন্ধন থেকে মুক্ত হল। ১৬২৫ সালে একটি ইংরেজ জাহাজ এসে রাজা প্রথম জেমস এর শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল দেশটিতে। এরপর থেকে দেশটি প্রায় ৪০০ বছর ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ব্রিটেন তার দাস ব্যবসাকে অতীতের পাপ হিসাবে অনুশোচনা করা স্বত্বেও কিছু বার্বাডিয়ান ব্রিটেনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।

ডেভিড ডেনি নামের একজন অ্যাক্টিভিস্ট নতুন প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি উদযাপন করেছেন, কিন্তু বলেন যে, তিনি প্রিন্স চার্লসের সফরের বিরোধিতা করেন, তার অভিযোগ ব্রিটেনের রাজপরিবারও দাস বাণিজ্য থেকে বহু শতাব্দী ধরে উপকৃত হয়েছে।

ব্রিজটাউনে একটি সাক্ষাত্কারে ডেনি বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন, রাজপরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’।

ইংরেজরা প্রাথমিকভাবে তামাক, তুলা, নীল এবং চিনির বাগানে শ্রম দেয়ার জন্য সাদা ব্রিটিশ চুক্তিবদ্ধ চাকরদের ব্যবহার করেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই বার্বাডোস ইংল্যান্ডের প্রথম সত্যিকারের লাভজনক দাস সমাজে পরিণত হয়।

১৬২৭ থেকে ১৮৩৩ সালের মধ্যে ৬ লাখ আফ্রিকানকে বারবাডোসে ক্রীতদাস বানানো হয়েছিল। এদেরকে চিনির বাগানে কাজ করিয়ে ইংরেজ মালিকরা ধনী হয়েছিল।

১৫ থেকে ১৯ শতকের মধ্যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দেশগুলো আটলান্টিকের দাস ব্যবসায় ১ কোটিরও বেশি আফ্রিকানকে শেকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসেছিল। যারা প্রায়শই নৃশংস সমূদ্র যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল, তারা বৃক্ষরোপণে পরিশ্রম করে শেষ হয়েছিল।

শেষবার ব্রিটিশ রাণীকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে, যখন ভারত মহাসাগরের দ্বীপ মরিশাস নিজেকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিল।

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ