নোমান আব্দুল্লাহ।।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হলো হজ। হজের সামর্থ্য রয়েছে এমন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হজ করা ফরজ। কারো উপর হজ ফরজ হয়ে গেলে তার জন্য দ্রুত হজ করে নেওয়া উচিত। কোরআন ও অসংখ্য হাদিসে হজের গুরুত্ব ও ফজিলতের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
হজের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘হজের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের উপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা ভাল কাজের যা কর, আল্লাহ তা জানেন এবং পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৭)
অসংখ্য হাদিসে হজের গুরুত্ব ও ফজিলত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এক হাদিসে উত্তম আমল হিসেবে হজকে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুল সা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলেত প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোন আমল? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। প্রশ্ন করা হলো, তারপর কোন আমল অধিক উত্তম? তিনি উত্তরে জানালেন, কবুল হজ
(বুখারী ও মুসলিম)
আরেক হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. রাসুল সা. থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং হজের উক্ত সময়ে কোনো অহেতুক কথাবার্তা বা গুনাহ না করে তিনি এমন গুনাহমুক্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসে যেমন কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন গুনাহ থেকে পূত-পবিত্র হয়ে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক হাদিসেও গুনাহ মোচনের সুসংবাদ পাওয়া যায়। হজরত আমর ইবনুল আস রা. কে লক্ষ্য করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আমর! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার আগের সব গুনাহ নষ্ট করে দেয়, হিজরত তার আগের সব গুনাহ ধ্বংস করে দেয়, আর হজ তার আগের সব গুনাহ মোচন করে দেয়?’ (মুসলিম, মিশকাত)
সব আমলেরই বিশেষ সওয়াব ও প্রতিদান থাকে। আর হজের প্রতিদান হলো জান্নাত। হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরার মধ্যবর্তী সময়ের সগিরা গুনাহসমূহের জন্য ওমরাহ হলো কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
যেহেতু হজ আর্থিক ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত। তাই অনেকে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হজ পালন থেকে বিরত থাকে। অথচ হজ দারিদ্র বিমোচন করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, তোমরা হজ ও ওমরাহর ধারাবাহিকতা রক্ষা করো। কারণ এ দুটি দারিদ্রতা এবং গুনাহ উভয়টি দূর করে দেয়। যেমন হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (তিরমিজি, ইবনে খুজায়মা, নাসাঈ)
অন্য এক হাদিসে হজের জন্য খরচকৃত সম্পদকে সাতশো গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হজরত বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. ইরশাদ করেন, হজের জন্য খরচ করা জিহাদের ময়দানে খরচ করার মতো। অর্থাৎ হজে খরচকৃত সম্পদ সাতশো গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ)
এছাড়াও হজ ও ওমরাহ পালনকারীকে আল্লাহর মেহমান বলা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মেহমানের সাথে তার আশানুরূপ আচরণ করা হবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেন, হজ ও ওমরা পালনকারী আল্লাহর মেহমান। যদি তারা দোয়া চায় তবে তিনি কবুল করবেন। আর যদি আর যদি তার কাছে ক্ষমা চায় তবে তিনি ক্ষমা কর দিনেন। (ইবনে মাজাহ)
উপর্যুক্ত কোরআন ও হাদিস থেকে আমরা হজের গুরুত্ব ও ফজিলতের বিষয়টি জানতে পারি। আল্লাহ আমাদের হজে মাবরুর নসিব করুন, আমিন।
-এটি